সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর: পৃথিবীর সেরা ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বাঁকে বাঁকে বাঘ দেখা না গেলেও এখন দলে দলে হরিণের দেখা মিলছে। বনের নদী ও খালের পাড়ে হরিণের অবাধ বিচরণ বলে দেয় এ বনে বেড়েছে হরিণের সংখ্যা।
সুন্দরবনে বেশ কিছু পর্যটন স্পটে এখন হরহামেশাই হরিণ দেখতে পান পর্যটকেরা। দূর থেকে মানুষের শব্দ পেলেই ঘন বনে লুকোবার চেষ্টা করে লাজুক এ প্রাণীটি।
সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু বন বিভাগের কার্যালয়ে দিনরাত সব সময়ই হরিণের দলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। পূর্ব সুন্দরবনের কটকা, করমজল, হিরণপয়েন্ট, কচিখালী, সুপতি, ঢাংমারী, কোকিলমুণি, দুবলা অফিস পাড়ায় অসংখ্য হরিণ বনরক্ষীদের পাশাপাশি বিচরণ করতে দেখা যায়।
মানুষের সঙ্গে হরিণের সবচেয়ে বেশি সখ্য দেখা যায় করমজল ও কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়। করমজলে পর্যটকরা তাদের স্বপ্নের মায়াবী চিত্রল হরিণগুলোকে নিজেদের হাতে খাবার খাওয়াতে পেরে ধন্য মনে করেন।
কয়েক বছরে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ, গবেষক ও বনজীবীরা।
সুন্দরবনে কী পরিমাণ হরিণ আছে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) সার্বিক সহযোগিতায় সুন্দরবনে হরিণসহ ৫টি প্রাণীর সংখ্যার উপর জরিপ চালানো হয়েছে।
এ জরিপের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বর্তমানে সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজারটি। সেই হিসেবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণের বেড়েছে ৫৩ হাজার ৬০৪টি।
হরিণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বন কর্মকর্তারা বলেন, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের নিয়মিত টহলের কারণে হরিণ শিকারের সুযোগ কমে গেছে। সুন্দরবনে রাসমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়ায় হরিণ শিকার কমেছে। এছাড়া সুন্দরবনে অভয়ারণ্য বৃদ্ধি ও আবাসস্থলের উন্নয়ন ঘটায় বন্যপ্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণেও হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান। সুন্দরবনে আগের চেয়ে হরিণের চোরা শিকার কমে গেছে। এতে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া বনে পর্যাপ্ত গাছ পালা আছে যার কারণে হরিণের খাবারের সংকট নেই। খাবার পানির জন্য মিষ্টি পানির পুকুর কেটে দেওয়া হয়েছে। দুবলারচরে রাস মেলা হয় না। সীমিত আকারে পূজা হয়। যেখানে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যান। আগের মতো মানুষের ভিড় হয় না। রাসমেলার সময় এখন আগের মতো হরিণ শিকার হয় না। এসব কারণে বনে হরিণের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
উড়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরন এই প্রতিবেদককে বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে আগের তুলনায় এখন হরিণের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে কটকা, কচিখালী, নীলকমল, কালিরচর, মান্দারবাড়িয়া ইত্যাদি এলাকায় প্রায়ই খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা যায়। যা পর্যটকদের প্রচুর আনন্দ দেয়।