
মো: রাকিব, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ঘাট ইজারা ফিরে পেতে দিনব্যাপী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন সাম্পান মাঝিদের আটটি সংগঠনের তিন শতাধিক মাঝি। গত মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে দিনব্যাপী চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে তারা সাম্পান নিয়ে অনশন করেন। মাঝিদের অনশনের কারণে ঘাট দিয়ে কোনো যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে না। অনেক যাত্রী ঘাটে এসে নদী পার হতে না পেরে বিকল্প উপায়ে সড়ক পথে দীর্ঘ দূরত্ব ভেঙে শাহ আমানত সেতু দিয়ে স্ব স্ব গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছে। জন্মগত পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিকে ঘাট ইজারা না দেওয়ার প্রতিবাদ জানান তারা। সকাল সাড়ে সাতটায় কর্ণফুলীর সদরঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে সারি সারি সাম্পান বেঁধে রেখে সেখানেই অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন বয়সী মাঝিরা। এদের মধ্যে ২৫ বছরের যুবক যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন ষাটোর্ধ্ব মাঝিরাও।
সকাল থেকে অনশন করা সাম্পান মাঝি আবদুল মজিদ নিজ সাম্পানে বসে বলেন, আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে সাম্পান চালিয়ে আসছি। একশ বছর ধরে সাম্পান মাঝিরা সমিতি তৈরী করে নিজেরাই ঘাট চালায়ে আসছে। গত বৈশাখে ১ তারিখ থেকে মাঝিরা ঘাট ছাড়া হয়ে পড়েছি, আমার ঘাট ফেরত চাই।
অনশনরত সাম্পান মাঝিদের অভিযোগ, গত পহেলা বৈশাখ পেশাগত সাম্পান মাঝিদের (পাটনিজীবী) থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ইজারা দেন চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম। এর প্রতিবাদ জানিয়ে মাঝিরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী জানান, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট এলাকায় সাম্পান নিয়ে ভোর ছয়টা থেকে তিন শতাধিক মাঝি দিনব্যাপী অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গত ১ বৈশাখ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের তা ইজারা দেয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে ২৯ এপ্রিল পাটনিজীবীকে ঘাট ইজারা দিতে বলা হলেও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এ বিষয়ে পুনরায় আইনি মতামতের জন্য নির্দেশনাটি চসিক আইন কর্মকর্তার কাছে পাঠান। এরপর গত ছয় মাসেও মাঝিদের ঘাট ফিরিয়ে দেয়নি চসিক।
ঘাট হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীমাতৃক এই চট্টগ্রামের হাজারো সাম্পান মাঝি। তাই পাটনিজীবী সমিতিকে ঘাট ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সাম্পান মাঝিদের আটটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী এ অনশন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সদরঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি সাম্পান মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, সিটি করপোরেশন সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের ঘাট ইজারা দেওয়ায় আমরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। নিরুপায় হয়ে আমরা অনশনে নেমেছি।