মো: কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: গত ৭ বছরেও বন্ধ করা যায়নি অবৈধ টমটম। চট্রগ্রাম নগরির অলি-গলি বা মূল সড়কে টমটম ও বেটারী চালিত অবৈধ রিক্সা স্টেশনের সংখ্যা ডজনখানিক। স্টেশন গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী স্থানীয় প্রভাবশালী ও কথিত নেতা কর্মীরা।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টমটম স্টেশন চকবাজার ধুনিরপুল এলাকায়। মূল সড়কের উপর অবৈধ ‘টমটম’ স্টেশন। এ স্টেশনে প্রায় ১০০টির মতো টমটম চকবাজার ধনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত চলাচল করে। সিরিয়াল দিয়ে একপাশে আধা কিলোমিটার সড়ক জুড়ে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকে এসব যানবাহন। ফলে সড়কের অপর পাশে চলতে হয় দু,পাশের অনান্য যানবাহনকে। তার উপরে বাম পাশের অংশের ফুটপাতটি ধুনিরপুল থেকে ফুলতল মোড় পর্যন্ত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার। সরু সড়কটির এক পাশে টমটমের স্টেশন, অপর পাশে কাঁচা বাজার। মাঝখানের যে সড়কটি অবশিষ্ট থাকে সেখানে দুই পাশে থেকে যান চলাচল করতে মুশকিল হয়ে পড়ে।
শুধুমাত্র চকবাজার নয় বাকলিয়া থানার ১৯নং মিয়াখান নগরেও গড়ে উঠেছে এমনই একটি টমটম স্টেশন। প্রায় ৬ বছর পুরানো এই টম টম স্টেশন। প্রাথমিকভাবে ২০ টি টমটম থাকলেও বর্তমানে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০ টমটমের মাহফিল। মিয়াখাঁন সওদাগর পুল থেকে কালামিয়া বাজার পর্যন্ত এই টমটম গুলোর চলাচল। এই স্টেশন গুলোতে রয়েছে টমটম সিরিয়াল বজায় রাখার কর্মী। যাতে কোন টমটম চালক নিয়ম ভঙ্গ আগে যাত্রী তুলতে না পারে।
নেই কোন প্রকার কাগজপত্র এবং নাম্বার প্লেট। অনেক টমটমের রয়েছে বেহাল দশায়। যার কারনে ঘটছে দূর্ঘটনা। রয়েছে শুধু এলাকার প্রভাবশালী স্থানীয়দের দাপট। যারা নিজের বাড়ির সামনেই তৈরী করেছে টমটম’র গ্যারেজ। এই দাপটওলাদের প্রতিমাসে টমটম চালকরা প্রতি টমটমের পিছনে প্রদান করতে হয় মাসোহারা। যার পরবর্তীতে ভাগ হয় স্থানীয়দের মাঝে। এলাকায় আরও রয়েছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা যাদের যাত্রি বহনের পরিধি বক্সিরহাট থেকে কালামিয়া বাজার।
স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বাবলু জানান, আমি ২০১৫ সালে একটি টমটম ক্রয় করি। সড়কে নামানোর পূর্বে এলাকার এক প্রভাবশালীকে আমার টমটমটি তার গেরেজে রাখতে বলে। যার জন্য তাকে প্রতিমাসে ১৫০০ হাজার টাকা করে প্রদান করতে হবে মর্মে জানায়। কিন্তু আমি তার গেরেজে রাখতে রাজি না হওয়ায় আমার টমটমটি রাস্তায় চলতে দেখলে ক্ষতি করবে মর্মে জানায়। স্থানীয় সেই প্রভাবশালী এই টাকাটি প্রশাসনের জন্য নিয়ে থাকেন বলে জানায়। পরবর্তীতে চাপের মুখে আমি টমটমটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করি।
এই সকল ব্যাটারি চালিত টমটম স্টেশন নগরীর বাকলিয়া ও কোতোয়ালী থানাধীন জেমিসন থেকে তুলাতলী, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, স্টিলমিল, রাহাত্তারপুল থেকে চকবাজারের ফুলতলী ও দিদার মার্কেট থেকে শুরু করে বউ বাজার হয়ে জামাই বাজার রোডে অন্তত চার শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা চলছে।
টমটমের জন্য ঘটছে দুর্ঘটনাসহ দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘন্টাই লেগে থাকে যানজট। টমটমের স্টেশন বা ফুটপাত দখল নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে মারমুখী আচরণ করে চালকরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি টমটম থেকে দিনে ৩০০-৫০০ টাকা আদায় করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালালে ৩০০ টাকা, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চালালে দিতে হবে ৫০০ টাকা। এ হিসাবে ১০০টি টমটম থেকে দিনে ৩০০ টাকা করে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা আর মাসে আয় হয় ৯ লক্ষ টাকা। একইভাবে ৫০০ টাকা করে দৈনিক আয় হয় ৫০ হাজার টাকা এবং মাসে আয় হয় ১৫ লক্ষ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে এক টমটম চালক জানান, করোনার সময়ে আমাদের দৈনিক গাড়ির ইনকাম বাবদ ৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা নিয়েছিল কোম্পানীরা। কিন্তু এদের চাঁদা ৫০০ টাকাই দিতে হয়েছে। এদের অত্যাচারে মুখ খুলতে পারি না। কারণ মুখ খুললে গাড়ি চালাতে দিবে না। পুলিশ প্রশাসন তাদের হাতেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, রাস্তার উপর টমটম রাখার কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। আর রিকশা বা অন্য কোনো যানবাহন যদি এদের এসব অন্যায় নিয়ে কথা বলে তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী আচরণ করে।
যাদের দাপটে নগরের চকবাজার এলাকায় টমটম স্টেশন বসিয়ে চাঁদাবাজি, তাদের কায়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। গত ২৬ আগস্ট গ্রেফতারের বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গ্রেফতারকৃত চারজন হলেন – মো. নুরুল হাকিম (২০), মো আলমগীর মিয়া প্রকাশ রুবেল (২৬), শহিদুল ইসলাম জায়েদ (৪৩) ও এসএম সামাদ (৩২)। এদের মধ্যে এসএম সামাদ নিজেকে চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকার যুবলীগ নেতা পরিচয় দেন। গ্রেফতারকৃত চারজনই র্যাবের হাতে গ্রেফতার সন্ত্রাসী নুর মোস্তফা টিনুর সহযোগী বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, চকবাজার এলাকায় অবৈধভাবে টমটম স্টেশন বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব টাকা ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (টমটম) থেকে চাঁদা হিসেবে আদায় করা হয়েছিল।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, আসামিরা টমটম থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করে। এসব টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। তাদের চাঁদাবাজি ছাড়া বৈধ কোনো পেশা নেই।