মুরাদ হোসেন বিপ্লব, চট্রগ্রাম থেকে: করোনা সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ব যখন তোলপাড় ঠিক তখনই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও এই মহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা মহামারীতে সত্তর বছর বয়সের এক বৃদ্ধের শরীরে এই ভাইরাস ধরা পড়ে পরক্ষণে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তারপর আস্তে আস্তে একের পর এক করোনা রোগী ধরা পড়তে শুরু করে। এমন অবস্থায় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় লকডাউনের প্রথম অবস্থায় যদিও এই লকডাউন ১০ দিনের জন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার কোনো প্রকার উন্নতি না দেখলে এই লকডাউন একের পরে এক বর্ধিত তারিখ ঘোষিত হতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় এপ্রিল মাসে হওয়া এইচ এস সি পরীক্ষা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, শিল্প-কলকারখানা গার্মেন্টস সহ গণপরিবহন যাতায়াত ব্যবস্থা ও পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধের দোকান ব্যতীত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। নিরীহ ও খেটে খাওয়া মানুষ হয়ে পড়ে কর্মহীন। বন্ধ করে দেয়া হয় বিদেশ থেকে আসা সকল ফ্লাইট। লকডাউনে বাসাবাড়িতে বন্দি হয়ে পড়ে হাজারো কর্মজীবী মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করা হয় সেই সময়। তারপরও যেন খেটে খাওয়া মানুষের দুঃখ কষ্ট কোনমতে দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। বাসা ভাড়া চালাতে না পেরে শহর ছেড়েছে হাজারো মানুষ। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে অর্থনীতিতে অনেক দূর। এমন অবস্থায় সকল শিল্প-কলকারখানা গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান মালিকগণের অনুরোধে ও উৎপাদন ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সরকার সিদ্ধান্ত দেয় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত শিল্প কলকারখানা ও যানবাহন সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করার অনুরোধ জানায় সকলকে যা মেনে নেয় শিল্প কলকারখানা গার্মেন্টসহ গণপরিবহন এর মালিক ও শ্রমিক। শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্টসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক দূরত্ব বজায়, কর্মীদের হাত স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
পরিবহনে দুই সিটে একজন করে বসার এবং অন্তত তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো চিত্র। দুই সিটে একজন বসানোর বাহানায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকগণ প্রস্তাব রাখেন সরকারের প্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করার। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রস্তাবের মুখে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বিপরীতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার প্রস্তাব মঞ্জুর করেন এবং এই সকল নিয়ম কানুন মেনে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়। প্রথম প্রথম যদিও এ সকল নির্দেশ মেনে চলে পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু এক পর্যায়ে নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অধিক যাত্রী নিয়েও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।
কিছু কিছু অসাধু চালক আবার কোন কোন জায়গায় ৬০ শতাংশ বাড়ার বিপরীতে ১০০ শতাংশ ভাড়া আদায় করছে। নেই কোন সামাজিক দূরত্বের বালায়। নগরীর অলংকার বাস স্টেশনের দূরপাল্লার বাসগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মুখে মাস্ক না থাকা যেন নিত্যদিনের চিত্র। বসার সিট পুরন হওয়ার পরও ধাক্কা ধাক্কি করে দাড়িয়ে যাত্রী বহনের চিত্র ধরা পড়ে বাসগুলোতে। এ ব্যাপারে কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদেরকে পড়তে হয় উল্টা বিভ্রান্তিতে। ট্রাফিক আইন রয়েছে কিন্তু নেই কোন প্রয়োগ।
সাধারণ মহলের দাবি যেহেতু মানা হচ্ছে না কোনো সামাজিক দূরত্ব তাহলে দ্রুত বর্ধিত ভাড়া অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।