
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মানব পাচার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে রূপান্তর-এর আশ্বাস প্রকল্পের উদ্যোগে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় মানব পাচারের ভয়াবহতা, কারণ ও প্রতিরোধের কৌশল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় পিজ্জা মিলান কনফারেন্স হলে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদের উপস্থিততে লার্নিং শেয়ারিং মিটিং এবং সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানব পাচারের ভয়াবহতা, প্রতিরোধ কৌশল এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তার পথ খোঁজার লক্ষ্যেই এ আয়োজন।রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ’র সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিএফ, আশ্বাস, রূপান্তর সাতক্ষীরার মাহবুবুর রহমান আকন্দ ও কুমারেশ মণ্ডল, উইনরক ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম অফিসার (কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মাসনুন হক, অগ্রগতী সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক শেখ মাহবুবুর রহমান, রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী সুবল কুমার ঘোষ, উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সোস্যাল প্রটেকশন) শেখ নাজমুল ইসলাম এবং অগ্রগতি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুর সবুর বিশ্বাস। এসময় বক্তারা বলেন, মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সংকট, যা বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরার মতো অঞ্চলে আরও প্রকট। ভারতের নিকটবর্তী হওয়ায় পাচারের প্রবণতা এখানে বেশি; পাশাপাশি দারিদ্র্য, সচেতনতার অভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবিকা সংকটে পতিত মানুষ পাচারকারীদের সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।সভায় মানব পাচারের মূল কারণসমূহ যেমন বিকল্প জীবিকার অভাব, নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি, দুর্বল সীমান্ত নিরাপত্তা এবং সামাজিক কুসংস্কার নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। বক্তারা মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতি, ভুয়া বিবাহ প্রতারণা এবং অবৈধ অভিবাসন চুক্তির মাধ্যমে কিভাবে মানব পাচার সংঘটিত হয়, তা তুলে ধরেন।
সারভাইভার শাম্মি আক্তার ও হিরা আক্তার তাঁদের জীবনের মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তাঁরা জানান, কিভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তাঁরা পাচারের শিকার হয়েছিলেন এবং কিভাবে রূপান্তরসহ অন্যান্য সংগঠনের সহায়তায় তাঁরা সম্মানজনক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য উপস্থিত সকলকে আবেগাপ্লুত করে।
বক্তারা মানব পাচার রোধে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ে শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর জোর দেন। একইসঙ্গে মানব পাচারবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভুক্তভোগীদের মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং একটি শক্তিশালী কমিউনিটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে স্বপন কুমার গুহ বলেন, “মানব পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ, সচেতনতা এবং সক্রিয় কমিউনিটি অংশগ্রহণ অপরিহার্য। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর পরিসরে কার্যক্রম চালানোর অঙ্গীকার করছি।”
প্রাণবন্ত আলোচনা, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান এবং বাস্তবসম্মত সুপারিশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সাতক্ষীরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মানব পাচার প্রতিরোধে রূপান্তরের এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ