জাতীয় ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে যান বরখাস্ত হওয়া এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারেন তিনি নিজেই ওই মামলায় অভিযুক্ত।
ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক (বর্তমানে বরখাস্ত) আনিসুজ্জামানের ছুটি বহির্ভূত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়ে তদন্ত করতে যান তিনি।
গত ২৮ মার্চ বেলা ১১টার দিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত হলে জানতে পারেন অভিযুক্ত এরইমধ্যে বাদী হয়ে আদালতে পাল্টা যে মামলা করেছেন, ওই মামলায় স্বয়ং শিক্ষা অফিসার নিজেই অভিযুক্ত। নিজে অভিযুক্ত হওয়ায় জেলা শিক্ষা অফিসার বাদীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারেন না। ফলে তদন্ত না করেই ফিরে যান তিনি।
আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন বরখাস্ত হওয়া আনিসুজ্জামান। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান তৎকালীন কমিটি কর্তৃক বরখাস্ত হলে আনিসুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩ বছর মামলায় লড়ে স্বপদে বহালের নির্দেশনা পান মনিরুজ্জামান। কিন্তু তাকে তারপরও দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরে স্বপদে বহাল হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে মনিরুজ্জামান পুনরায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার ফিরে পান। মনিরুজ্জামান প্রধান শিক্ষকের পদে বহাল হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ছুটি মঞ্জুর না হলেও সুইডেনে অবস্থান করছিলেন আনিসুজ্জামান। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য দুই বছরের ছুটির আবেদন করেন আনিসুজ্জামান। কিন্তু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাকরি বিধি মোতাবেক স্ববেতনে দুই বছর ছুটি দেয়ার ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির ছিল না। বিদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তার সম্মতিপত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত হয়নি উল্লেখ করে ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। ছুটি মঞ্জুর না হলেও আনিসুজ্জামান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ আনিসুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থায়ীভাবে বরখাস্তের আবেদন জানানো হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরাবর।
এ বিষয়ে তদন্তের জন্য শিক্ষাবোর্ড ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের টিম গত ২৮ মার্চ আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। সে সময় তিনি জানতে পারেন যে, গত ৬ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের মহাপরিচালক ও তিনিসহ (জেলা শিক্ষা অফিসার) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আনিসুজ্জামান পাল্টা আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন আদালতে। সে মামলায় অভিযুক্ত স্বয়ং তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। এ তথ্য জানতে পেরে তদন্ত না করেই ফিরে যান তিনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান জানান, আমি যেহেতু নিজে অভিযুক্ত, সে কারণে তদন্ত করিনি। কোর্ট অব কনটেম্পট এড়াতে তদন্ত করা হয়নি।
প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, ছুটি বহির্ভূত বিদেশে দীর্ঘদিন অবস্থান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য আনিসুজ্জামানকে বিধি অনুসরণ করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্তের পূর্বে এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত টিমের সুপারিশ ক্রমে তা করা হয়েছে। এমনকি আনিসুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে জনপ্রিয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।