নেত্রী যে বছর দেশে ফিরলেন সেটা আশির দশকের শুরুতে ।সময়টা তাঁর জন্য খুবই বৈরী । আমরা হাইস্কুলের ছাত্র ।পরের বছর উনি খুলনাতে এলেন ।যোগাযোগ এত সুন্দর ছিল না ভালো মনে আছে কলারোয়া থেকে বাস গিয়েছিল আমাদের
বাড়ির কয়েক জন তার মধ্যে । সেবার শঙ্কর পদ শেঠ সহ কলেজের নবীন ছেলেরা বাসের ছাদে উঠে মিছিল করে চলে যায় আমি ছোট সেকারণে তারা সাথে নেয়নি ।কলেজে উঠে বঙ্গবন্ধু আর নেত্রীর নামে কত প্রকার শ্লোগান যে কতভাবে আওড়াতে পেরে ধন্য মনে করেছি । কখনও লোকাল আবার কখনো ঢাকার থেকে আমদানি হতো । ছাত্র লীগের রাজনৈতিক সময়ে বেশ কয়েক বার কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ও কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের মিটিংয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের সমন্বয়ে বেশ কয়েক বার নেত্রীর দর্শন দূর থেকে ঘটেছে ।
সেটা একপ্রকার ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া কোন এক স্মৃতির পাতার খেলা ।
ছাত্র লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে থানা ছাত্র লীগের সভাপতি থাকা কালীন সময়ে বিরানব্বই বারোই ফেব্রুয়ারি ইউ পি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রিয়েল লাইফ শুরু ।
যদিও বাহাত্তরের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সত্তরের নির্বাচনে জয়ী পার্লামেন্ট মেম্বার গনকে ঢাকাতে তলব হয় ।
মনে আছে কোন এক বর্ষার সকালে প্রাইমারি স্কুলের মাঠ থেকে বড়ো চাচার(মমতাজ আহমেদ )এর সরকারি গাড়ির চালক নূরূজ্জালাল চাচা আমার হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।সাথে ফরহাদ ও ফৌজী ভাই সহ পরিবারের সদস্যদের কিছু সদস্য ছিল । সেবার এম পি হোস্টেলে উনত্রিশ দিন ছিলাম ।বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেয়ে বঙ্গবন্ধুর দেখা ও স্নেহ পেয়েছিলাম ।
চুরানব্বই এ নেত্রী প্রথম কলারোয়া হয়ে সাতক্ষীরা সহ দক্ষিণ বঙ্গের সফর শুরু করেন ।আমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সম আনারুল খুবই তরুণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেত্রী কে ছোট্ট উপঢৌকন দিতে পেরে বহু দিন ফুরফুরে মেজাজে চলে গেছে ।
জননেত্রী অত্যন্ত স্মরণ শক্তি সম্পন্ন যা কিনা বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিকতা পেয়েছেন । পরের বার খুলনার মিটিংয়ে আমাদের কিছু নেতাদের সাথে আমাদের তরুণ ইউ পি চেয়ারম্যান দের কথা বলেছিলেন ।
ধারাবাহিক তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে অনেক চড়াই উতরাই পার করতে হয়েছে ।দুবার আমরা বিরোধী দলে। অনেক স্রোতের উজানে চলে সেটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল । এ অবস্থাতে নেত্রীরর সাথে তিন বার দেখা করার সুযোগ হয়েছিল ।দেখার পর তিনি যেভাবে লোকাল নেতাদের খোঁজ খবর নিতেন তা উনার মত বড়ো মাপের মানুষের জন্য বিরল বটে ।
আমার ভালো মনে আছে ধানমন্ডির আগের অফিসে কোন এক বিকেলে ছোট ভাই দুলাল চন্দ্র গাইন (চারুকলার ) সাবেক ছাত্র লীগ সভাপতি সহ আমরা নেত্রীর সাথে দেখা করি ।উনি আছরের নামাজ পড়ে অফিসে বসে আছেন । মুখোমুখি হওয়ার পর পরিচয় পর্বে আমার দিকে জিজ্ঞেস করলেন চাচার (মমতাজ আমমেদ )কেমন আছেন ।তার পর সম আলাউদ্দিন মামার কথা পরে সৈয়দ কামাল বখত্ সাকী চাচার কথা। তারপর এলাকার টুকটাক কিছু খবর জানতে চেয়েছিলেন ।
প্রত্যন্ত অন্চলের মানুষ কে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরে আর এমনটি কোন বড়ো মাপের নেতা বাংলাদেশে আসেনি । ছিয়ানব্বই নির্বাচনে দল ক্ষমতায আসার পর আমি স্বপন ভাই আনারুল মোরশেদ আমিনুলইসলাম লালটূ সহ কয়েক জন গনভবনে দেখা করতে গিয়েছিলাম ।
সেবার ও যেয়ে দেখি বড়ো চাচা ওখানে হাজির অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই কারা যেন ভিতর থেকে এসে বড়ো চাচা কে ভিতরে নিয়ে গেলেন ।পরেই আমরা প্রবেশ করে দেখি নেত্রী চেয়ার ছেড়ে উঠে চাচার সাথে হেসে হে সে কথা বলছেন খুব পারিবারিক পরিবেশে । বাহাউদ্দিন নাছিম ভাই পাশে ।নেত্রী কে আমাদের দেখিয়ে পরিচয়ের পরে চাচা নিজ কথার মধ্যে ডুব দিলেন । কত আন্তরিক পরিবেশে যে মানুষ কে সম্মান করে কথা বলতে নেত্রী কে দেখে শিক্ষা নিতে কষ্ট হওয়ার কিছু নেই ।
আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে ।
কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের প্রধান মন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিশ্ব মানের একটা এওয়ার্ড নিতে জননেত্রী এসেছেন । প্রশান্ত মহাসাগরের জল অনেক গড়িয়েছে । আশি নববয়ের দশকের শেখ হাসিনা আজ নেতা হিসেবে বিশ্ব মানের ব্রান্ডের লেডার শীপে আরোহন করেছেন ।
তাতে কি ।
যে শেখ হাসিনা সেই রয়ে গেছেন তাঁর অন্তর আত্মার এতটুকু পরিবর্তন দেখলাম না ।
গতকাল কের সম্মর্ধনা টা কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপ আমেরিকা সহ সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এক অনবদ্য অনুষ্ঠানে পরিনত হয়েছিলো আমার একান্ত নিজস্ব চিন্তা তে । ভেনু টা চমকপ্রদ ।যেখানে বিশ্বের নামিদামি ঘটনার অভিষেক ঘটেছে আগেই ।জন এফ কেনেডি চার্লস ও ডায়ানা কে সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণা এখানে ।
তাইতো নেত্রী বক্তৃতার শুরু থেকেই শেষ অবধি দুটো ঘন্টা মন খুলে বাংলাদেশের আনাচে কানাচের কত স্মৃতির পাতা থেকে সমানে বিশ্ব রাজনীতির পৃষ্ঠা উন্মোচন করতে করতে আমাদের কে
বাংলাদেশের অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যত ভিষনের কবিতা পাঠের মাধ্যমে উপস্থিত সকলকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন।
সত্যি বলতে কি নেত্রী সত্যিই অন্যন্য।
বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন মাথা উচু করে দাড়ানোর শিক্ষা ।
আর তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভবিষ্যতের আশার আলো
জয়তু শেখ হাসিনা ।
অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক