
মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: সেতু মেরামতের এক মাস যেতে না যেতেই কালুরঘাট সেতুর পুনারয় বেহাল দশা। ৫৭ লাখ টাকার মেরামত কিন্তু এরইমধ্যে কালুরঘাট সেতুতে আবারও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। উঠে গেছে কাঠের পাটাতন, ভেঙে গেছে রেলিং। অথচ ১০ দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সংস্কার করা হয় সেতুটি। প্রশ্ন উঠেছে, ঐ ১০ দিন তাহলে কী কাজ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ?
এই বিষয়ে ঘোষনা দেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন। তার ঘোষণা মতে গত ১৩ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ জন্য প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু এই আদেশ ছিলো নামে মাত্র! উক্ত ১০ দিনে রাতে আরামছে চলেছে যানবাহন। কাজ তো দূরের কথা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৪ টনের যানবাহন চলেছে দেদারছে। যার চিত্র আগেই তুলে ধরা হয়েছে দৈনিক সাতনদীতে। এর উপর উঠেছে দূর্ণীতির অভিযোগ। এই দূর্ণীতির অভিযোগ উঠে অনিমেশ বড়–য়া মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে।
৫৭ লক্ষ টাকার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২১ শে জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্ব অঞ্চলের জিএমকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী সেলিম চৌধুরী। নোটিশ সূত্রে মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেলের দৃশ্যমান কোন সংস্কার কাজ হয়নি। বরাদ্দকৃত টাকাগুলো ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান ও রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্মসাত অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। দৈনিক সাতনদীতে গত ১৯ ও ২১ জুলাই দুইটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
কিন্তু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান অনিমেশ বড়–য়া। তিনি জানান, রেলের দূর্নীতি কিছু হয়নি। কাজের দৃশ্যমানের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংস্কারের অধিকাংশ কাজ হল লোহার গাডারের, ঐসব কাজ প্রতিদিন ৫ ঘন্টার সময়ে মধ্যে পর্যাপ্ত কাজ করা সম্ভব নয়। রাতের বেলা ৫ ঘন্টা গাড়ী বন্ধ রাখা হয়। তাতে দৃশ্যমান কাজ সম্পূর্ণ পারছি না।
কিন্তু স্থানীয়দের কাছে শোনা যায় তার বিপরিত। তাদের দাবি, বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে সংস্কারের জন্য ৫-৭ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। বাকি টাকা রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে।
শনিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুতে আগের মতোই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাটাতন উঠে গেছে। আগের গর্তগুলোতে বিটুমিন দিয়ে ভরাট করা হলেও সেগুলো উঠে গেছে। কয়েকটি জায়গায় রেলিং ভেঙে গেছে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩০ সালে নির্মিত কালুরঘাট সেতুতে ১৯৫৮ সাল থেকে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলাচল করছে। একমুখী চলাচলের কারণে দুইপাশে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি সেতুর ওপর চাপ বেড়েছে। তাই বারবার মেরামত করে সেতুটি সচল রাখার ব্যবস্থা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুটির বয়স হয়েছে ৯০ বছর। ২০০১ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সেতুটি মেরামত করা হয়। এর আগে ২০০৪ সালেও এটি মেরামত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ছোটখাটো মেরামতকাজ করতে হয় বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই সেতুর।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে এখনও টাকা দেওয়া হয়নি। তারা একবছরে যতবার ভেঙে যাবে ততবার সেতুর সংস্কার করবে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে সেতুতে আবারও গর্ত সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। বর্ষাকাল হওয়ায় সংস্কারকাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি থামলে আবারও সেতুটি সংস্কার করা হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে পুরনো রেল সেতুর স্থানে নতুন ‘রেলওয়ে কাম রোড সেতু’ নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে শুধু রেল সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়ায় প্রকল্পটির কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যায়ে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের দাবি উঠলে পুরনো নকশায় সেতুটি নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে। প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭.২ মিটার। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা হতে হবে ১২.২ মিটার। এতে সেতুর বর্তমান নকশা তৈরি নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ।