প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় ডু্বুরিরা। এরপরই শুরু হয় লঞ্চ থেকে লাশ তোলার কাজ। প্রথমে ৪ থেকে ৫ জন ডুবুরি এই কাজ শুরু করেন। তারা এক এক করে লাশ নিয়ে পানির ওপর ভেসে আসেন। দুপুর দেড়টার মধ্যে উদ্ধার করা হয় ৩০ জনের লাশ। এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও তিনটি শিশু ছিল। পরে আরও ২ জনেরসহ মোট ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম জন ডুবুরিরা। এরপরই শুরু হয় লঞ্চটির উদ্ধার কাজ। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা ধারণা করছেন লঞ্চটিতে ৪৫ থেকে ৫০ জন মানুষ ছিলেন।
লাশের তালিকায় যারা
যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে তারা হলেন- ১. সত্যরঞ্জন বনিক (৬৫), ২. মিজানুর রহমান (৩২), ৩. শহিদুল (৬১), ৪. সুফিয়া বেগম (৫০), ৫. মনিরুজ্জামান (৪২), ৬. সুবর্ণা আক্তার (২৮), ৭. মুক্তা (১২), ৮. গোলাম হোসেন ভুইয়া (৫০), ৯. আফজাল শেখ (৪৮), ১০. বিউটি (৩৮), ১১. ছানা (৩৫), ১২. আমির হোসেন (৫৫), ১৩. মো. মহিম (১৭), ১৪. শাহাদাৎ (৪৪), ১৫. শামীম ব্যাপারী (৪৭), ১৬. মিল্লাত (৩৫), ১৭. আবু তাহের (৫৮), ১৮. দিদার হোসেন (৪৫), ১৯. হাফেজ খাতুন (৩৮), ২০. সুমন তালুকদার (৩৫), ২১. আয়শা বেগম (৩৫), ২২. হাসিনা রহমান (৪০), ২৩. আলম বেপারী (৩৮), ২৪. মোসা. মারুফা (২৮), ২৫. শহিদুল হোসেন (৪০), ২৬. তালহা (২), ২৭. ইসমাইল শরীফ (৩৫), ২৮. সাইফুল ইলাম (৪২), ২৯. তামিম ও ৩০. সুমনা আক্তার। বাকি দুই জনের নাম এখনও জানা যায়নি।
সুমনের অলৌকিক ফেরার দাবি
লঞ্চ উদ্ধার তৎপরতার মধ্যে রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে ঘটে এক ভিন্ন ঘটনা। পানির নিচে তলিয়ে থাকা লঞ্চটি থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানায় উদ্ধারকর্মীরা। লঞ্চটিকে উদ্ধারের জন্য যখন ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় (কুশন পদ্ধতি) কাজ চলছিল, তখন বাতাস ভর্তি একটি কুশন লঞ্চ থেকে ফসকে উপরে উঠে আসে। কুশন উপরে উঠে আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে একজনকে জীবিত ভাসতে দেখতে পায় উদ্ধারকারীরা। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম সুমন। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশিষ বর্ধন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমরা ধারণা করছি উদ্ধার হওয়া এই ব্যক্তি সম্ভবত ইঞ্জিন রুমে ছিলেন। সাধারণত ইঞ্জিন রুম এয়ারটাইট হওয়ার কারণে সেখানে পানি প্রবেশ করে না। ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কুশন পদ্ধতি ব্যবহার করে জাহাজ ভাসানোর চেষ্টা করা হলে সম্ভবত ইঞ্জিনরুম খুলে যায়। সে সময় তিনি বের হয়ে আসেন এবং উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন।’ তিনি আরও জানান, জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাতেই উদ্ধার সম্ভব ‘মর্নিং বার্ড’
সোমবার দিবাগত রাতের মধ্যেই ডুবে যাওয়া ‘মর্নিং বার্ড’ লঞ্চটি উদ্ধার সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সরকারি সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি রাতের মধ্যেই জাহাজটি সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করতে পারবো।’
চলছে উদ্ধার কাজ
ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারে সকালেই নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা হয় বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। বিকেলে জাহাজটি পোস্তগোলা ব্রিজের কাছে পৌঁছালেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। পোস্তগোলা ব্রিজের চেয়ে প্রত্যয়ে’র উচ্চতা বেশি হওয়ায় সেখানে আটকে যায় উদ্ধারকারী জাহাজটি। ফলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লঞ্চটি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (৩০ জুন) রাত সাড়ে তিনটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছে উদ্ধার কাজ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা, গ্রেফতার ৩
বুড়িগঙ্গা ট্র্যাজেডিরৱ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাতে ‘ময়ূর-২’ লঞ্চের মালিক জয়নালসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে নৌ-পুলিশ। অন্য আসামিরা হলেন লঞ্চটির মাস্টার আবুল বাশার, জাকির হোসেন, ড্রাইভার শিপন হাওলাদার, মাস্টার শাকিল ও সুকানি নাসির।
ইতোমধ্যে মামলার তিন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নৌ-পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এদিকে ঘটনাস্থলেই ময়ূর-২ লঞ্চটি বাধা রয়েছে। তবে সেটিতে কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারি নেই।