
কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম অফিস:
চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী বাসিন্দা মো: ফজলুর রহমান জাহাঙ্গীরের উপর চাঁদাবাজদের হামলার ঘটনার এক মাস পার হওয়ার পরও গ্রেফতার হয়নি আসামীরা। চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় গত ২৩শে মে দিন দুপুরে জাহঙ্গীরের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। মো: ফজলুর রহমান জাহাঙ্গীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় “যমুনা কাটিং হাউস” এবং “ফাতেমা প্লাস্টিক” নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বৎসর যাবৎ ব্যবসা করে আসছেন। ফজলুর রহমান জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সাগর ও তার ডাকাত দল নিয়মিত চাঁদা আদায়সহ তাঁকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরের ছেলে ইবনে সাকিল জানায়, গত ঈদে চাঁদাবাজরা তাঁর বাবার কাছে একটি মটরসাইকেল দাবী করে বসে। যা দিতে অক্ষম হওয়ায় মটরসাইকেলের বিপরিতে নগদে আড়াই লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করে। সাকিল আরও জানায়, তারই ধারাবাহিকতায় আমার বাবা তাদের দাবী মোতাবেক মোটর সাইকেল বা নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় সন্তাসীরা ক্ষীপ্ত হয়ে গত ২৩শে মে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আগের দিন দুপুর বেলায় আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্মচারীদের ঈদ উপলক্ষে বেতন পরিশোধ করার জন্য বাবা নগদ ৩,৩২,২০০ টাকা নিয়ে গেলে। উক্ত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রস্বস্ত্র নিয়ে পূর্ব থেকে ঔতপেতে থাকা অবস্থায় আমার বাবার জায়গায় মোটর সাইকেল যোগে পৌছালে সাগর, মো: জাহাঙ্গীর আলম, মো: আমিন, মো: শাহ জাহান মাতবরসহ পরিচয় অজ্ঞাত আরো ৮—১০ জন সন্ত্রাসী আমার বাবাকে অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে ঘিরে ফেলে। আমার বাবার বিবরণ মতে সন্ত্রাসী সাগরের হাতে ছিলো হকিস্টিক, সন্ত্রাসী জাহঙ্গীরের হাতে ছিল পিস্তল, সন্ত্রাসী আমিনের হাতে ছিল লোহার পাইপ, সন্ত্রাসী মো: শাহ জাহানের হাতে ধারালো ছুরি অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে কারো হাতে ছুরি, কারো হাতে লোহার রড। সাকিল বলেন, আমাদের জায়গায় সুমনের দোকানের সামনে আমার বাবা মোটর সাইকেল হতে নামা মাত্রই সন্ত্রাসী সাকিল তার হাতে থাকা হকিস্টক দিয়ে আমার বাবাকে এলো পাথারী পেটাতে থাকে। সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর তার পিস্তল দিয়ে আমার বাবার বুকে ঠেকিয়ে রাখে। সন্ত্রাসী আমিন লোহার রোড দিয়ে বাম পায়ে আঘাত করে। সন্ত্রাসী শাহ জাহান হত্যার উদ্দেশ্যে আমার বাবার গলায় ধারালো ছুরি চালাতে গেলেই বাবা প্রাণরক্ষায় বাম হাত দিয়ে ধারালো ছুরি ঠেকিয়ে দিলে বাবার বাম হাতের কেনুর জোড়াই শাহ জাহান ছুরি বসিয়ে দেয়। অন্যান্য সন্ত্রাসীরা সাগরের নির্দেশে আমার বাবাকে এলোপাথারী পেটাতে থাকে, তাঁদের পিটুনিতে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীদের দাবীকৃত আড়াই লক্ষ টাকার পরিবর্তে তাৎক্ষনিক দশ লক্ষ টাকা নগদ চাঁদা দাবী করে। তাদের দাবী মোতাবেক চাঁদা পরিশোধ না করলে বাবাকে তুলে নিয়ে হত্যা করার প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে আমার বাবাকে মুমূর্ষ অবস্থায় সিএনজি করে ছিন্নমূল কাঠাল তলায়স্থ তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে মুক্তিপন হিসেবে দাবীকৃত দশ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে বাবাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
সাকিল আরও জানায়, বাবাকে আক্রমণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার মানুষের চোখে পড়ায় তাতে বাবাকে বাঁচানোর জন্য এলাকার মানুষেরা শোর চিৎকার করে করে সন্ত্রাসীদের আস্তানার দিকে যৌথভাবে অগ্রসর হলে, সন্ত্রাসীরা বাবার কাছে ব্যাগভর্তি ৩,৩২,২০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে অর্ধমৃতবস্থায় আমার বাবাকে ফোরস্টক সিএনজিতে তুলে দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বাবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাত্ব আঘাত হয়। অন্যদিকে বাম হাত ও বাম পা একেবারে পঙ্গু হয়ে যায়। মুমূর্ষ অবস্থায় বাবাকে এলাকার মানুষেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২৬ নং ওয়ার্ডে ৫০ নং সিটে জরুরী চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। চট্টগ্রাম মেডিকেলে লাগাতার চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সীতাকুন্ড থানায় জাহাঙ্গীরের ছেলে বাদী হয়ে মামলা রুজু করেন। সীতাকুন্ড থানা মামলার নং— ৩১৯৬ । ঘটনার একমাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ প্রশাসন অদ্যবদী একজন আসামীকেও গ্রেফতার করতে পারে নাই। অন্যদিকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াসহ তার মালিকানাধীন জায়গা সন্ত্রাসীরা দখল করে নেওয়ার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরের জায়গার পার্টনার ইয়াছিন পাটোয়ারী জাহাঙ্গীরের পক্ষে থানা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করায় পাটোয়ারীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলেও পাটোয়ারী জানান। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সীতাকুন্ড, বায়েজীদ, আকবর শাহ্ থানাসহ নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত ছিন্নমূল এলাকায় হত্যা রাহাজানী চুরি ডাকাতী নারী নির্যাতনের মত জঘন্য অপরাধ প্রতিনিয়ত করে আসছে। আঘাত প্রাপ্ত ফজলুর রহমানের পরিবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেউ যেতে পারছেনা বলে বিশস্থ সূত্রে জানা জায়। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার জন্য ইয়াছিন ব্যাপারী বাদী হয়ে ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও পুলিশ কমিশনার সিএমপির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।