নব কুমার দে, তালা থেকে: সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামে এক বৃদ্ধ দম্পতি বলেন, সংসারে উপার্জনের কেউই নেই, এতদিন শ্রমবিক্রি করে সংসার চললেও বর্তমানে অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকতে হয়। কোন দিন খাওয়া জোটে, কোন দিন জোটে না। বয়স্কভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা কোনটাই কপালে জোটেনি আজ পর্যন্ত। নিজস্ব কোন ঘর বাড়ীও নেই, তাই বিলধারের অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নীচে আলগা গাছ তলায় অন্ধ স্ত্রী কে নিয়ে বসবাস।
এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তালার বারুইহাটি গ্রামের মৃত এজহার আলী মোড়লের ছেলে বাষট্টি বছরের বৃদ্ধ গফ্ফার মোড়ল ও তার অন্ধ স্ত্রী রওশানারা বেগম (৫৭)। দুজনেই বয়সের ভারে আজ অচল। তিনি আরও জানান, শীতের মধ্যি ছাপড়া ঘরে থাকতি থাকতি আরও পীড়িত হয়ে যাচ্ছি। সম্পদ বলতে নিজের কোন জমি-জায়গা নেই। এতদিন বোনের আশ্রয়ে মাত্র দু শতক জমির উপর মাটির ঘরটিতে বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু স¤প্রতি সেটিও ভেঙ্গে পড়েছে, টাকার অভাবে মেরামত করা হয়ে ওঠেনি। শরীর ভালো থাকলে কাজ করে খেতাম, কিন্তু দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় এখন কাজ করার শক্তি নেই শরীরে। সরকারী কোন সহযোগীতাও পাইনে আমরা। মেম্বর-চেয়ারম্যান কেউই খোঁজও নেয়না। একমাত্র মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে, বৃদ্ধ বয়েসে দেখাশোনারও কেউ নেই। ‘‘প্রধানমন্ত্রী অনেককে তো ঘরদিলো,আমার একটা ঘর দিলে শেষ বয়েসে থাকতি পারতাম।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বারুইহাটি পশ্চিম পাড়ার গফ্ফার মোড়ল (৬২) তার অন্ধ স্ত্রী রওশানারা বেগম (৫৭)কে নিয়ে বিলধারের বাঁশতলায় অন্যের জায়গার উপর জরাজীর্ণ ঘুপড়ী ঘরে মানবতার জীবন-যাপন করছেন। রান্নার কালিঝুলির পাশাপাশি রান্নার আগুনের দ‚র্ঘটনার আশংকায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বৃদ্ধ দম্পত্তির থাকা-খাওয়া সবই এটুকু জায়গায়।
গফ্ফার মোড়লের স্ত্রী রওশানারা বেগম চোখে দেখতে পাননা, তিনি বলেন, কখন যে ঝড়-বাতাসে ঘরটি ভেঙ্গে পড়ে, সে জন্য রাতেও ঘুমাতে পারিনা। শুনেছি, জায়গাজমিসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়, তিনি শেষ বয়েসে একটি ঘর পাওয়ার আকুতি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধ গফ্ফার মোড়ল আসলেই একজন অসহায় লোক। সে যে ঘরটিতে থাকতো সেটি অন্যের বা ভেঙ্গে পড়েছে, তা আমার জানা নাই।
খোলা আকাশের নীচেই ঠিকানা বৃদ্ধ দম্পতির
পূর্ববর্তী পোস্ট