
নিজস্ব প্রতিবেদক: খা খা রোদ বা রাতের আধার কোন কিছুই তোয়াক্কা নেই। মানুষকে বাঁচাতে হবে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। রাতের আধারে অসহায়ের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া আবার দিনের আলোতে তিব্র খা খা রোদেও ক্লান্তিহীন ছুটে চলা, এ যেন জীবনকে বাজি রেখে দেশপ্রেম। খাবার পৌঁছাতে হবে অসহায় মানুষদের হাতে। নয়তো তারা খাবে কি ? এমন উপলদ্ধি এখন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের।
শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরাত্বে খোলপেটুয়া নদী। নদী পার হয়েই পদ্মপুকুর ইউনিয়ন। অসহায় মানুষদের দূর্দশার খবর শুনে মঙ্গলবার সকালে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী।
নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী দৈনিক সাতনদীকে বলেন, সারাদেশের চিত্র আর আমার উপকূলীয় মানুষের চিত্র এক নয়। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দিন এনে দিন খায়। এক দিন কাজ না করলে তাদের খাবার হয় না। করোনা মোকাবেলা করতে গেলে এখন ঘরে থাকার বিকল্প নেই। তাদের যে কোন ভাবেই আমাদের ঘরে রাখতে হবে। ঘরের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তাদের হাতে খাবার পৌছাতে হবে।
তবেই সকল মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করা যাবে। একেবারেই উপকূলীয় পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বাড়িতে খাবার না থাকা ৫০ পরিবারের মাঝে আজ (মঙ্গলবার) খাবার তুলে দিয়েছি। গতকালও (সোমবার) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ৫০ পরিবারে খাবার দেওয়া হয়েছিল। প্রকৃত অসহায় মানুষদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার এ কার্যক্রম আমাদের চলমান থাকবে।
করোনা পরিস্থিতিতে গভীররাত বা খা খা রোদে ক্লান্তিহীন ছুটে চলার অনুভূতি কেমন এমন প্রশ্নে নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী জানান, এখন আমাদের একটাই উপলব্ধি মানুষকে বাঁচাতে হবে। কেউ যেন না খেয়ে কষ্ট না পাই। যখন জানতে পারি, কেউ খাবার না থাকায় খেতে পারছেন না বা বাড়ির খাবার ফুরিয়ে গেছে। তখন ওই মানুষটির বাড়িতে খাবার না পৌঁছানো পর্যন্ত মুখ দিয়ে খাবার যায় না, আমি খেতে পারি না। কোন কষ্টকেই এখন কষ্ট মনে হচ্ছে না। যখন কারো বাড়িতে বা হাতে খাবার পৌঁছে দিয়ে হাসি মুখটা দেখছি তখন সব ক্লান্তি-কষ্ট দূর হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমার চাকুরিতে এসে মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
বাড়িতে খাবার না থাকা পদ্মপুকুর এলাকার আতিয়ার রহমান। মঙ্গলবার তিনি ইউএনওর দেওয়ার খাবার সামগ্রী পেয়েছেন। খাদ্য সামগ্রী পেয়ে হাসি খুশি আতিয়ার রহমান বলেন, বাড়িতে কোন খাবার ছিল না। আজ যদি চাল, ডাল, আলু, তেল না পেতাম তবে পরিবার নিয়ে আজ না খেয়েই কাঁটাতে হতো আমাদের।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একযোগে কাজ করছেন জেলার সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ। হোমকেয়ারেন্টাইন নিশ্চিত, অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে জীবনবাজী রেখে দেশ ও মানুষের পাশে থাকার নাম দেশপ্রেম। দেশ সেবায় সকলেই একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তবেই করোনাকে আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।