
দেশের কয়েকটি কোম্পানির তৈরি করা ‘রেমডেসিভির’ চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসতে পারে—এমনটাই জানানো হয়েছে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। ‘রেমডেসিভির’ অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ। মূলত এটি ইবোলার সময়ে ব্যবহার করা হলেও এখন ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন দিয়েছে আমেরিকার দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।
তবে করোনা ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবের সময়ে ওষুধ পাওয়ার বিষয়টি স্বস্তির হলেও এর দাম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, সরকার নির্ধারিত ১১৭টি ওষুধের বাইরে তারা অন্য কোনও ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কোম্পানিগুলো সে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে। কোম্পানিগুলো প্রত্যেক ‘রেমডেসিভির’ইনজেকশনের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করেছে।
‘রেমডেসিভির’ ইনজেকশন আইটেম, এটা ব্যবহার করা হবে কেবলমাত্র হাসপাতালে জটিল রোগীদের চিকিৎসায়। ‘রেমডেসিভির’ ইনজেকশন হিসেবে পাঁচ থেকে ১০ দিনের মেয়াদে দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এসকেএফ, ইনসেপ্টা এবং বিকন ফার্মার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে হবে । অর্থাৎ যারা পাঁচদিন এ ওষুধ ব্যবহার করবেন তাদের খরচ হবে সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। আর ১০ দিন করে নিলে খরচ হবে ৫৫ হাজার টাকা। কোম্পানিগুলো বলছে, বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি, কাঁচামালসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোই ওষুধটির দাম বেশি হওয়ার মূল কারণ।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের তৈরি এ ওষুধের নাম হবে নিনোভির। এটি দ্রুতই বাজারে আসবে। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। দামটা বেশি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মনে করছি অন্যান্য সময়ে এর দাম হতো বর্তমানে নির্ধারিত দামের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু বর্তমানে রেমডেসিভির-এর কাঁচামালই ‘ওভারপ্রাইজড’। তিনি বলেন, যে কোনও ইনজেকশন লিকুইড হলে মূল্য কম হয়, যদি পাউডার ফর্মে হয় তাহলে তার দাম বেশি হয়। কারণ, পাউডার ফর্মে যে ম্যানুফেকচারিং প্রসেস বা তার ‘ইনগ্রিডিয়েন্টস’ একটু কস্টলি। যে কারণে সবাই দাম বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছে।’’
ইতোমধ্যেই বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং এসকেএফ তাদের উৎপাদিত রেমডেসিভির-এর নমুনা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এই অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বেক্সিমকোর ওষুধের পরীক্ষা শুরু হয়েছে আগেই। এসকেএফের নমুনা জমা হলো মাত্র। হয়তো আজ (শনিবার) অথবা আগামীকাল থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। এখন এই পরীক্ষাতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারা বাজারজাত করার অনুমতি পাবে।
কিন্তু, এসব ওষুধের দাম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে সেক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কী করার আছে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রাইমারি হেলথ কেয়ার তালিকায় যে ১১৭টি ওষুধ রয়েছে সেগুলোর দাম সরকার নির্ধারণ করে, বাকিগুলোর দাম নির্ধারণ করে কোম্পানি। এ ওষুধ সরকার নির্ধারিত তালিকার বাইরের ওষুধ।
তিনি বলেন, এ ওষুধ কেবলমাত্র কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে সরবরাহ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে বেসরকারি পর্যায়ে বাজারজাত করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ যেন বিক্রি না হয় সে শর্তও তারা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ওষুধ ফার্মেসিতে খুচরা বিক্রি করা যাবে না।
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক (গ্লোবাল বিজনেস ) মনজুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের তৈরি ওষুধটির নাম হবে পেনডোভির। এটি বাজারে আসতে পারে মধ্য জুন নাগাদ। রেমডেসিভির ইনজেকটেবল আইটেম, অনেক দাম পড়ে যাবে। আর এটা কেবলমাত্র হাসপাতালে ভর্তি জটিল রোগীদের জন্য।
তিনি বলেন, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে পেনডোভির বিক্রি হবে। একজন রোগীর দরকার হবে পাঁচ থেকে ১০টি ইনজেকশন। সে হিসেবে ৬০ হাজার টাকা দরকার হবে। সরকার যদি কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক থেকে শুরু করে সবকিছু ‘প্রত্যাহার’ করতো তাহলে দেশে এসব ওষুধ আরেকটু কম মূল্যে পাওয়া যেতো।
অপরদিকে এসকেএফের পরিচালক ( মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মুজাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিভিয়ারিটির’ ওপর নির্ভর করে এটি পাঁচ থেকে থেকে ১০ দিন ব্যবহার করতে হবে। তাদের তৈরি ওষুধটির নাম হবে রেমিভির। দাম হবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। বেশি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচামালসহ অন্য ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করেই এ দাম রাখা হয়েছে। কেবল এসকেএফ নয়, প্রায় প্রতিটি কোম্পানিই একই রকম মূল্য নির্ধারণ করেছে।
‘রেমডেসিভির’ প্রকৃতপক্ষেই করোনার চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে কিনা জানতে চাইলে শহীদ সোওরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রেমডেসিভিরের ব্যবহার এখন পর্যন্ত কোনও দেশ এপ্রুভ করেনি এবং কোনও দেশে ট্রায়ালও হয়নি। এটা পুরোপুরিই পরীক্ষামূলক একটি বিষয়। এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউনকে