
মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ইমরান সরদার, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) থেকে: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্ত্রী ও যুবকের রহস্যজনক ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার ঘটনায় জড়িত থাকা নিহতের স্বামী ও তার ছোট দেবরকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলারোয় পৌর সদরের শ্রীপতিপুর নিহতের বাড়ি সংলগ্ন পাঁচিলের পাশ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রড ও আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো নিহত ফাতেমার স্বামী বাক প্রতিবন্ধী শেখ আহসান ও তার আপন ছোট ভাই শেখ আসাদ।
উল্লেখ্য, রবিববার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ উপজেলার শ্রীপতিপুর গ্রামের একটি আমগাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।নিহত ফাতেমা বেগম (৪০) উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের শ্রীপতিপুর গ্রামের শেখ আহসানের স্ত্রী। এছাড়া মারা যাওয়া যুবক করিম পাড় (৩০) শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট দক্ষিণপাড়ার জয়নাল পাড়ের ছেলে। পরকীয়া প্রেমঘটিত বিষয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাতমিকভাবে ধারণা করে এলাকাবাসী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “সকালে ফাতেমা বেগমের শ^শুর শেখ আব্দুল হাই আমাকে ফোন করে জানায় আমার বাড়িতে দুইজন আত্মহত্যা করেছে। থানা পুলিশে খবর দাও। আব্দুল হাইয়ের ছেলে শেখ আহসান বাক প্রতিবন্ধী। প্রেমঘটিত কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে সকলেই ধারণা করছেন।
ফাতেমা বেগমের ছোট জা’ সানজীদা জানায়, আহসানের সাথে ফাতেমার ২৫ বছর বিয়ে হয়েছে। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা কখনও কোন সমস্যা দেখিনি।
আহসানের বোন মাকসুদা জানান, ভোরে আহসান নামায পড়তে যাওয়ার সময় বাড়ির ৫০ গজ দূরে একটি আম গাছে তাদের মরদেহ ঝুলতে দেখে চেচামেচি করতে থাকে। পরে বাড়ির লোকজন গিয়ে তাদের মরদেহ ঝুলতে দেখে। কিন্তু করিম পাড় সম্পর্কে কোন তথ্য তারা দিতে পারেননি।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবির রবিবার জানান, মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। যুবকের শরীরে আমরা কোন আঘাতের চিহ্ন পায়নি। তবে গৃহবধূর মুখে ও গলায় আচড়ের দাগ ছিল। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিন সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারী) ঘটনাস্থল কলারোয়ায় যেয়ে বলেন, নিহত ফাতেমার সাথে দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্কে ছিল শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট এলাকার জয়নাল পারের ছেলে নিহত করিম পারের সাথে। ঘটনার দিন রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে নিহত ফাতেমার শ্বশুরবাড়ির পরিত্যক্ত এক কক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় দু’জনকে দেখেন তার স্বামী। নিহত ফাতেমার বাক প্রতিবন্ধী স্বামী ও তার ছোট দেবর আসাদের সহযোগিতায় প্রথমে দু’জনকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। নাটকীয়তা সাজাতে পরে নিহত ফাতেমার গায়ে ব্যবহৃত কালো রঙের ওড়না ও গামছা দিয়ে গলায় বেঁধে দু’জনকে এক আম গাছে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে।
এ ঘটনায় নিহত করিমপারের বাবা জয়নাল পার একটি মামলা দায়ের করেন তারই প্রেক্ষিতে ২৪ ঘন্টার ভিতরে ঘটনায় জড়িত থাকা প্রধান ২ আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তাদেরকে হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে। এ সময় কলারোয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মীর খায়রুল কবীর ও থানা পুলিশের সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।