সচ্চিদানন্দদেসদয়(আশাশুনি):
রং বে রংয়ের বাহারী সাইনবোর্ড আর প্যাকেজিং মিষ্টি তৈরি করা হলেও আশাশুনির হাটবাজারে অবস্থিত বিভিন্ন মিষ্টির দোকান গুলোতে ভেজাল ছানা ও সিনথেটিক রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। সবচয়ে খারাপ ভাবে মিষ্টি তৈরি হচ্ছে উপজেলার গ্রামের হাটবাজারে অবস্থিত মিষ্টির দোকান গুলোতে। বিশেষ করে রসগোল্লা,পানতুয়া, কালোজাম, লেডিকেনি, সন্দেশ, রসমালাই আর এ সমস্ত মিষ্টি তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এতে উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন যুক্ত ভেজালছানা, মিশানো হচ্ছে সিনথেটিক রং। খাদ্যদ্রব্য ও ফলমুলে বিরোধী অভিযান চালানো হলেও বরাবর আড়ালে থেকে যায় মিষ্টির দোকান ও কারখানা গুলো। বিভিন্ন হাটবাজারে অবস্থিত মিষ্টির দোকানগুলো সংলগ্ন কারখানা গুলো এত নোংরা যা দেখলে গা শিউরে উঠে। কারিগর গুলোর পোষাক পরিচ্ছেদ এত নোংরা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আর ঐ পরিবেশে আশাশুনির হাট বাজারে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। আশাশুনির বুধহাটা বাজার, পাইথলী বাজার, মহেশ্বরকাঠি, শোভনালীর সরাপপুর বাজার, কামালকাটি, বদরতলা বাজার, কুল্যা ইউনিয়নের গুনাকরকাটি বাজার, কাদাকাটি ইউনিয়নের কাদাকাটি, তেঁতেলিয়া বাজার, দরগাপুরের খরিয়াটি বাজার, খাসবাগান বাজার, দরগাপুর, আশাশুনি সদরের আশাশুনি, বড়দল ইউনিয়নের বড়দল, শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া কালিবাড়ী, মহিষকুড়, খাজরা ইউনিয়নের খাজরা বাজার, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট ও একসরা বাজার, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া অবস্থিত মিষ্টির দোকাল গুলো অত্যান্ত নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরি করে যা মানব শরীরের জন্য অত্যাধিক ক্ষতিকর। আর এ সমস্ত মিষ্টি তৈরিতে যে ছানা ব্যবহার করা হয় সে গুলো সাধারনত টানা দুধের ছানা। যখন কোন ছানা মিষ্টির কারখানায় পৌঁছায় তখন এর গুনাগুন সহ বিভিন্ন রোগ জীবানু বাসা বাঁধে। মিষ্টির কারখানা গুলোতে সোডা ও বরিক পাইডার মিশিয়ে ঘন করা হয় দুধ। স্বাভাবিক নিয়মে ৫-৬ কেজি দুধ থেকে ১ কেজি ছানা তৈরি হয় কিন্তু ভেজাল পদ্ধতিতে ৩-৪ কেজি দুধ থেকে ছানা উৎপাদন করা হচ্ছে এক কেজি পরিমাণ। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে দুধ ভাল রাখা বা সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মাখন বিহীন ছানায় ফ্যাটের পরিমান বাড়াতে ডালডা ও মেশানো হয়। এ ছানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে অধিকাংশ মিষ্টি। যে পরিবেশে এ মিষ্টি তৈরি হচ্ছে তাও অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা বলে একাদিক কারিগর জানায়। আরও জানায়, ভেজাল ছানা দিয়ে আগের দিনের অবিক্রিত মিষ্টি মিশিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। শুধু তা নয় মিষ্টির স্বাদ বাড়ানোর জন্য বিস্কুটের গুড়া ব্যবহার করা হয়। আশাশুনির বুধহাটা বাজারের একটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, মেঝের উপর চট বিছিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে ছানা ও ময়দা মিশিয়ে কারিগররা মিষ্টি বানাচ্ছে। সেখানকার পরিবেশ এত নোংরা যে, দেখলে যে কেউ আতকে উঠবে। বিভিন্ন সময়ে একাধিক বার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও তা আবার পুরনো চেহারায় ফিরে আসে। পুষ্টিবিদরা বলেন, মিষ্টি স্বাস্থের জন্য উপকারী, কিন্তু ভেজাল ছানায় মিষ্টি তৈরি হলে তাকে অখাদ্য বলতে হবে। এছাড়া মিষ্টিতে ব্যবহৃত রং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে হার্ট, লিভারসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানী হতে পারে। আর যদি ফরমালিনের ব্যবহার থাকে তাহলে লিভার অকেজো, প্যারালাইসিস ও ক্যান্সারের ঝঁকি থাকে। একারণে উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আশাশুনিতে গুনাগতমানহীন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে মিষ্টান্ন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
পূর্ববর্তী পোস্ট