
সচ্চিদানন্দদেসদয়: আশাশুনি উপজেলার ৪০ বছরের অধিক ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দ্বাতাকে রাজাকারের তালিকাভুক্ত করায় এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দীর্ঘকালের চেয়ারম্যান মোবারক আলি মোড়লের পুত্র রবিউল ইসলাম ও ভাই মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন জানান, এলাকার সর্বজন প্রিয় মোবারক আলি ১৯৫৮ সালে প্রথম ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত নির্বাচিত হন। এরআগে মেম্বার ছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত একটানা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ পর্যন্ত পুনরায় চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ হতে তিনি আওয়ামীলীগ ঘরানার চেয়ারম্যান হিসাবে পরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি কখনো সক্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেননা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল। তিনিই তাদের নিরাপদ বাস ও খাওয়া দাওয়া দিয়ে ছিলেন। তৎকালীন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকা, তাদেরকে নিরাপদে ভারতে যেতে সহযোগিতা করা এবং তাদের সহায় সম্বল গচ্ছিত রেখে ও স্বাধীনতার পরে তাদের হাতে আমানত ফিরিয়ে দিয়ে তিনি নজির স্থাপন করেন। এজন্যই তিনি সকল নির্বাচনে এলাকার হিন্দু মহলের নিরস্কুশ সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার জীবদ্ধশায় এবং ইতিপূর্বে কখনো তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাকে কুচক্রি মহলের ভুলতথ্যের ভিত্তিতে রাজাকারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে তারা দাবী করেন। এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার লিয়াকত আলি জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন। আমরা ৩ মাস তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে তাদের বাড়িতে উঠলে বাড়ির মহিলারা অতিকষ্ট করেও আমাদের আহার ও আশ্রয় গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগি হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি রাজাকার ছিলেন এমন কোন কথাবার্তা তাদের জানানেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাম মোল্যাসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন। ’৭১-এ তিনি হিন্দুদের দেখভাল করতেন। সহিংসতা বা কারো কোন ক্ষয়ক্ষতি বা অপমান তার দ্বারা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়া দাওয়া ও আশ্রয়দ্বাতা ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের দাবী চক্রান্ত করে তাকে রাজাকার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ সকলের প্রতি বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্তপূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়েছেন।