
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরার দুই সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ও ইয়রব হোসেন মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা দাবি করেছেন, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে আদালত থেকে বারবার জামিন আবেদন নাকচ করা হচ্ছে।পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ষড়যন্ত্র করে তাদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকলেও অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় তাদের নাম যুক্ত করা হয় । এদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার ইত্তেফাকের সাংবাদিক আজাদুর রহমান খান বর্তমানে প্রাণনাশের ভয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার অভিযোগ গেল বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বাড়ি, দোকানঘর ও অন্যান্য সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। হাবিবুর রহমান দৈনিক সাতনদী প্রতিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, ইয়াবব হোসেন সমাজের আলো নামে একটি অনলাইন পোর্টালে সম্পাদক একই সাথে তিনি নতুন সময় নামে একটি পত্রিকায় সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত।
হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আজিজা আনজু বলেন, আমার স্বামী নিরপরাধ।সাংবাদিকতার কারণে কিছু প্রভাবশালী লোকের বিরাগভাজন হয়েছেন। এখন রাজনৈতিক চাপের কারণে তার জামিন হচ্ছে না। এদিকে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে ।তিনি সহ তার পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপর্ত্তাহীনতায় ভুগছেন ।
ইয়রব হোসেনের স্ত্রী মোসলেমা বেগম অভিযোগ করেন, একটি মামলায় স্বাক্ষী দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিছু প্রভাবশালী লোকেরা তার স্বামীর জামিনে বার বার বাঁধা গ্রস্ত হচ্ছে । একই সাথে তাকে বার বার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। একজন মানুষকে আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হচ্ছে। আমি অতি দ্রত তার মুক্তির দাবীজানাচ্ছি।এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত হাবিবুর রহমান ও ইয়রব হোসেনের মুক্তি দাবি করেছে। তারা বলছে, সাংবাদিকদের হয়রানিও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সাথে দেশের সকল কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপর্ত্তার দাবী জানিয়েছেন তারা। আজাদুর রহমান খান চৌধুরী, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর দৈনিক ইত্তেফাকের কলারোয়া উপজেলা প্রতিনিধি এবং ২৭ বছর ধরে কলারোয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ও তার পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার কারণে তারা বহু বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত হামলার শিকার হয়ে আসছেন। ২০০২ সালে শেখ হাসিনার গাড়িবহর হামলার ঘটনায়—যেখানে তার বড় ভাই ছিলেন একজন সাক্ষী। এর পর থেকেই বিএনপি-সমর্থিত কর্মী ও সহযোগীরা তার পরিবারকে বারবার টার্গেট করেছে।
সর্বশেষ বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। সে সময় বিএনপির সশস্ত্র দল তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়, যা তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। সেদিন রাতে তিনি কলারোয়া ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছান এবং পরে ঢাকায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তালা-কলারোয়ার সাবেক এমপির ভাগ্নে খালিদ মঞ্জুর রোমেল প্রাণনাশের হুমকি, বিপুল পরিমাণ চাঁদা দাবি এবং তার স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে একাধিকবার থানায় অভিযোগ করার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় হামলাকারীরা তার বাড়ি, মার্কেটসহ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায়। তখন স্থানীয় পত্রিকাগুলো ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ না করায় তিনি ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়েন তিনি । সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়।
এরপরে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে মায়ের মৃত্যুর পর তাকে জানানো হয়, জানাজায় গেলে তাকে হত্যা করা হবে বলে তিনি শেষ বিদায় জানাতেও পারেননি মাকে । জীবননাশের আশঙ্কা এবং দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে তিনি বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছেন তিনি । বর্তমান সরকারের কাছে তিনি সহ তার পরিবারের নিরাপর্ত্তার দাবী জানিয়েছন ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাড, বদিউজ্জামান বলেন,রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া আদালতের প্রক্রিয়ায় এগোলে মামলাগুলোর দ্রুতনিষ্পত্তি ও জামিন পাওয়া সম্ভব।
সাতক্ষীরা আদালতের পিপি অ্যাড. আব্দুর সাত্তার জানান, জামিন দেওয়ারবিষয়টি সম্পূর্ন আদালতের বিষয় । এখানে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নেই ।আসামীদের নিদৃষ্ট সময়ে জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কলারোয়া উপজেলার যুবদল নেতা খালিদ মনজুর রোমেলের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এদিকে জেলার সাংবাদিক সংগঠনগুলো ও মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে সাংবাদিকদের নিরাপর্ত্তাসহ অবিলম্বে জামিন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।