নিজস্ব প্রতিবেদক :
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলামের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও লুটপাটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। সম্প্রতি এক হিন্দু ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কাজী শরিফুলের নেতৃত্বে ছিনিয়ে নেয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করে ওই ব্যবসায়ীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন উপজেলার বিএনপি’র নেতা কর্মীরা। কাজী শরিফুলের বে-আইনি কর্মকান্ডে বিএনপির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এ ধরণের লুটেরা ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে না পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সচেতন মহল। স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে একশ্রেণির অতি উৎসাহী জনতা ভাংচুরসহ নানা প্রকার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এ সুযোগে মহাসমারোহে লুটপাট ও চাঁদাবাজির মিশনে নামেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কুশুলিয়া পুলিন বাবুর মোড় এলাকার কাজী নবীদুল ইসলাম ওরফে নবু কাজীর ছেলে কাজী শরিফুল ইসলাম (৩৫) ও তার কিছু সহযোগীরা। তারা ৫ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে সংঘবদ্ধ ভাবে কুশুলিয়া গ্রামে অবস্থিত লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের তন্ময় মন্ডলের মালিকানাধীন ‘সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজ’ নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
এ সময় তারা দোকান ঘরের সার্টার ভেঙে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মুরগির ফিড ও প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ঔষধসহ দোকানের যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কাজী শরিফুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুরে অবস্থিত ওই ব্যবসায়ীর আরেকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ফিড ও বিভিন্ন মালপত্র লুট করে। এ সময় তন্ময় সাধুর একটি বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেলও লুট করে নিয়ে যায় তারা। লুটকৃত যাবতীয় মালামাল ও মোটর সাইকেল রাখা হয় কুশুলিয়ার পুলিন বাবু হাটখোলা সংলগ্ন কাজী শরিফুলের বাড়িতে।
পরবর্তীতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে কাজী শরিফুলের বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজের পরিচালক তন্ময় সাধুর ভাই বিকাশ সাধুর কাছে ফেরত দেন। তবে অন্যান্য মালপত্র ফেরত পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তন্ময় সাধু।
এদিকে সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার দুলাল চক্রবর্তী জানান, ৫ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে তাদের দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী বাহিনী। যারা লুটপাটে জড়িত ছিল তাদের চিনতে পারলেও এই মুহুর্তে তাদের নাম বলা সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত কোনো মালামাল উদ্ধার না হলেও লুট করে নিয়ে যাওয়া মোটর সাইকেলটি উদ্ধার হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
কুশুলিয়া গ্রামের বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ৫ আগস্ট থেকে এখনো পর্যন্ত নিরবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে শরিফুল ইসলাম। তার বাড়ি থেকে তন্ময় সাধুর লুট হয়ে যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছিল। কাজী শরিফুল ইসলাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সুনাম নষ্ট করছেন বলে জানান ওই বিএনপি নেতা।
উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক রোকনুজ্জামান রোকন এর ছত্রছায়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী শরিফুল ইসলাম অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। উপজেলা কৃষকদলের ওই নেতার বিষয়ে তদন্ত করলে অনেক অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা-কর্মী।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুশুলিয়ার ইউনিয়নের আহ্বায়ক কাজী শরিফুল ইসলাম সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজে লুটপাটের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে এটা সত্যি। কারা করেছে সেটা প্রতিষ্ঠানের মালিক অবগত রয়েছেন। এছাড়া তার বাড়ি থেকে লুট হয়ে যাওয়া মোটর সাইকেল উদ্ধারের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কাজী আবু সাঈদ সোহেল তার সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলামের বাড়ি থেকে মহেশ সাধুর মোটর সাইকেল উদ্ধারের বিষয় স্বীকার করে বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর দলের অনেকে না বুঝে কিছু কিছু অপকর্ম করেছে। তবে যারা অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়েছিল এবং এখনো অপকর্ম করছে তাদের অপরাধের প্রমাণ পেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। তবে ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।