
নিজস্ব প্রতিবেদক: কেবল শিক্ষা বিস্তার বা সংস্কারেই খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) নিজকে নিয়োজিত রাখেননি, মানবকল্যাণ ও উন্নয়নে তিনি নিজকে ব্যাপৃত করেছিলেন। মানব জাতির কল্যাণের আলোকবর্তিকা নিয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে জন্মগ্রহন করেছিলেন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, সমাজ সংস্কারক, আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ ও দার্শনিক হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)। রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মস‚চির অংশ হিসেবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি কক্ষে ‘ঐশীপ্রেম ও মানবতার সেবায় হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)’ শীর্ষক একটি সেমিনার বক্তারা এ কথা বলেন।
সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহাঃ বশিরুল আলম। এসময় তিনি বলেন, হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাকে নিয়ে স্বল্প সংখ্যাক কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। সেখান থেকেই তাঁর সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানতে পারি। তিনি ছিলেন মানব প্রেমী। স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টের সেবাকে ব্রত নিয়েই ছিলো তাঁর চলা। এসময় তিনি ইসলামি ফাউন্ডেশনের সাথে এই সেমিনার করার জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব আবু আহমেদ সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ডি রজারিও, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এম এহছানুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ঈসা শাহেদী এবং সমাজত্ত্ববিদ, লেখক ও গবেষক ড. খন্দকার সাখাওয়াত আলী। সেমিনারে সঞ্চালনা করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ।
এসময় বক্তারা আরোও বলেন, হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্ল (র.) লেখনী ও কর্ম থেকে বুঝা যায় তার চিন্তা-চেতনা জুড়ে ছিল সৃষ্টির প্রতি প্রকৃত প্রেম-ভালোবাসার চর্চা করা। মানবতার সেবার মধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চেয়েছেন। তিনি যেখানে গেছেন যেমনই থেকেছেন তিনি স্রষ্টার বিশালত্বকে উপলদ্ধি করেছেন। পরমাত্মার থেকে নিজ নিজ মানবাত্মার আবির্ভাব ও বিচরণ সেই পরমাত্মার জ্ঞানলাভ, সেই পরমাত্মার প্রেমে মশগুল বা বিভোর হয়ে প্রেমময়ে আত্মসমর্পণের মধ্যে মানবজীবনের চরম লক্ষ্য ও পরম সার্থকতা। পরমাত্মা জ্ঞানের তিনটি মার্গ- জ্ঞানমার্গ, কর্মমার্গ ও প্রেমমার্গ। প্রেমময়ের সন্তুষ্টি সাধন হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র জীবনের একমাত্র ব্রত ছিল। ধর্ম আর কর্মের মধ্যে সংযোগ সাধন করেছেন তিনি। বক্তারা আরো বলেন, যেসমাজে ইকোনোমিক জাস্টিস নেই, সোশ্যাল জাষ্টিস নেই, জুডিশিয়াল জাস্টিস নই সেই সমাজে ইসলাম আছে বলে মনে হয় না। সমাজের কল্যাণে মসজিদকে বহুম‚খি কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে বলে বক্তারা বলেন।
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্ল (র.) মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। সমগ্র জীবনে মানবের মঙ্গল চেয়েছিলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি শতাধিক বই লিখেছেন, বর্তমান সময়ে তাঁর বই বেশি বেশি পড়তে হবে, বুঝতে হবে ও তার পথকে অনুসরণ করতে হবে।