- অনুমতি ছাড়াই যৌন হয়রানীকারী রফিজ মিঞার পক্ষে ছাফাই গাইতে শতাধীক শিক্ষকের ভীড়;
- রফিজ মিঞার পক্ষে স্থানীয় এক গডফাদার কলকাঠি নাড়ছে;
হাবিবুর রহমান, শ্যামনগর থেকে ফিরে: শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞার বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষকের অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হল গতকাল। উপজেলা জুড়ে শতাধিক প্রধান ও সহকারী শিক্ষক কোন প্রকার ছুটি ছাড়াই যৌনহয়রানির দায়ে অভিযুক্ত রফিজ মিয়ার পক্ষে লিখিত জবান বন্দি দেন। রফিজ মিঞার পক্ষে স্থানীয় এক গডফাদার কলকাঠি নাড়ছে। খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্মুখে এমন অনিয়মের কান্ডে শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত দুইমাস আগে মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর ওই নারী শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের অপারেশন এন্ড পলিসি বিভাগের উপ-পরিচালক ড.নাছিমা খাতুন ওই তদন্তকাজ পরিচালনা কর
সকাল ৯টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত একটানা তদন্ত কাজ পরিচালিত হয় শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষ অফিসে। ড. নাছিমা খাতুন তদন্তভার হাতে পেয়ে বিধি মোতাবেক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস বরাবর চিঠি প্রদান করেন। গত ১৯ জানুয়ারী সকাল ১১টার উপজেলা শিক্ষা অফিস, শ্যামনগরে ই-মেইলে চিঠি আসলেও আবেদনকারীকে নোটিষ করা হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার অপকর্মের সাথীদের যথা সময়ে জানিয়ে তদন্ত কার্যক্রমকে ভিন্ন খাতে নিতে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আবেদন কারী ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক সংবাদ পেয়েছেন শনিবার রাত ১০টার পর তদন্তকারী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বৃহস্পতিবার চিঠি পাওয়ার পর সংবাদটি অজ্ঞাত কারণে আবেদন কারীকে দেওয়া হয়নি।
তদন্তকালীন সময়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পিপীলিকার মতো দলে দলে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসছেন উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকগণ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিঞার দাওয়াতে। রফিজ মিঞাকে বাচাঁতে শতাধিক শিক্ষকের উপজেলা শিক্ষা অফিসে পদচারণায় টুইটম্বুর। কানাকানি চলছে কিভাবে রফিজ মিঞাকে সেভ করা যায়। সপ্তাহের ওপেনিং ডে তে এতো শিক্ষক ছুটি নিয়ে শিক্ষা অফিসে এসেছেন কিভাবে? কার আহবানে এত শিক্ষক উপজেলা আসলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শ্যামনগর উপজেলা শাখার সভাপতি দীনেশ চন্দ্র জানালেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তের খবর পেয়ে শিক্ষকগণ এসেছেন। সরকারী চাকুরী বিধি অনুযায়ী উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা যায় না। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অপকর্মের তদন্ত কাজকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এসব শিক্ষকের আগমন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। নারী শিক্ষকের শীলতাহানীর অভিযোগের সাক্ষ্যদানকারী এত শিক্ষকের বহর দেখে মনে হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাদেরকে ভাড়া করেছেন। তদন্তের সময় দেখা গেছে, শিক্ষা অফিসার নিজে সাদা কাগজ সরবরাহ করেছেন আর শিক্ষকগণ একজন অন্যজনের মতামত নিয়ে তাদের নিজেদের লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগের তদন্ত অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ঘটনা। তদন্ত কার্যক্রম এমন খোলামেলা হলে বিষয়টি কতটা শোভনীয়? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্ব সাধারণের মনে। উপজেলার কতিপয় নেতৃস্থানীয় শিক্ষকের দূর্ণীতির খবর ইতোমধ্যে অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে। সেই সকল শিক্ষকগণকে দেখা গেছে শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞার পাশে থেকে লিখিত বক্তব্যসমূহ রফিজ মিঞাকে শুনিয়ে তারপর লিখিত বক্তব্যগুলো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিচ্ছেন। তদন্ত কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসারের কক্ষে বসে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আর শিক্ষকগণ বাইরে থেকে উৎসবের আমেজে রফিজ মিঞার পক্ষে লিখছেন। যেসকল শিক্ষকের লেখা শিক্ষা অফিসার ও বিশেষ নেতাদের মনপুত হয়নি তাদের লেখা ছিড়ে ফেলে পুনরায় লিখে জমা দিতে বাধ্য করেছেন। এমন কার্য তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়েছে। তদন্ত কালীন সময়ে আবেদনকারী নারী শিক্ষককের উপর ক্ষেপে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দেন উপজেলার ১১৪ নং বাইনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) দিপঙ্কর কুমার ঘোষ। তদন্ত কালীন সময়ে ওই নারী শিক্ষকের সাথে তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সার্বিক পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে প্রতিকার প্রার্থী ওই নারী শিক্ষক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে আবেদন করে মহাপাপ করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিজ মিঞা সর্বশেষ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকাকালীন সাবরিন সুলতানা নামের শিক্ষকের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগসহ নানা আর্থিক অনিয়মের কারণে গত এক বছর আগে তাকে শ্যামনগর উপজেলায় শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। রফিজ মিঞার শারিরীক ও মনাসিক চাপের কারণে বড়লেখায় তারাদরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জাফরী স্ট্রোক করেন এবং পরবর্তীতে মারা যান। এর পূর্বে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অনিয়মের কারণে শাস্তিজনিত বদলীতে জকিগঞ্জ উপজেলায় এবং সেখানেও অনিয়মের অভিযোগে খাগড়াছড়ি জেলায় শাস্তিজনিত বদলী হন।
তদন্ত কার্যশেষ হলে এ প্রতিবেদক তদন্তকারী কর্মকর্তা জনাব ড. নাছিমা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন,
‘রফিজ মিঞাকে সরিয়ে অন্য একজনকে দিলে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি না। আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় শিক্ষা অফিসার টিকছে না। এজন্য দায়ীদের সনাক্ত করতে হবে’।
নারী কেলেঙ্কারি অভিযোগের তদন্তে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের শিক্ষা অফিসারের পক্ষ নিয়ে গতকালের সার্বিক কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মিশ্র প্রতিস্ক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়ালে রেখে কেউ যেন পার না পান। শুধু উপজেলা শিক্ষা অফিসার নন, এই ধরনের ঘটনার সাথে যুক্ত প্রকৃত দোষী কেউই যেন হলে শাস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন তেমনটিই আশা করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ড. নাছিমা খাতুনের কাছে।