চট্টগ্রামবাসীর দাবীকে গুরুত্ব দিয়ে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য তথা বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর উপর আঘাত তথা কোন রকমের সৌন্দর্য্যহানি চট্টগ্রামবাসী সহ্য করতে পারবে না। চট্টগ্রামে মুক্তভাবে শ্বাস নেবার মতো প্রাকৃতিক প্রাচুর্যপূর্ণ আর কোন স্থান নেই একমাত্র সিআরবি এলাকা ছাড়া। এখানে পরিবেশ বিনষ্ট করার অধিকার কারো নেই। এখানে পরিবেশ ও ঐতিহ্যগত বিষয় গুলো বিবেচনা করে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে আইনগত বাঁধা থাকা স্বত্বেও কিভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দিয়ে এই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দিল তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে রোববার আয়োজিত এক প্রাণবন্ত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দেশ-বিদেশ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই আহ্বান জানান । সভাটির সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড: জমির চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, সিআরবির মত জায়গায় প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব কি করে আসে এবং সেটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন কিভাবে দিয়েছে তা কোনভাবেই বোধগম্য নয়। সবকিছুই কেমন যেন রহস্যাবৃত ও অনিয়মের চক্করে ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি । অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল এবং যে কোন প্রকারেই হউক চট্টগ্রামের পরিবেশের স্বার্থে সৌন্দর্যের স্বার্থে সিআরবি রক্ষা করা পক্ষে তিনি মত দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন বলে তিনি আশা করেন ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডাঃ ইসমাইল খান বলেন, এই এস্থানে একটি নতুন হাসপাতালের কোন যুক্তিকতা নেই । অতি সম্প্রতি কে বা কারা সেখানে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কথা বলছেন তাঁদের উদ্যেশে তিনি বলেন, যে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে যথাযত অনুমোদন প্রয়োজন, কিন্তু এধণের অনুমোদনের জন্য কোন আবেদন জমা পড়েনি বলে তিনি জানান। তিনিও সিআরবি এলাকাকে সম্পুর্ণভাবে সংরক্ষণ করার পক্ষে ঐক্যমত পোষণ করেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর সাবেক প্রশাসক রাজনীতিবিদ খোরশেদ আলম সুজন তাঁর বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রামবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখন একটি ভিক্ষা চায়, সেটি হচ্ছে সিআরবিকে আপনি রক্ষা করুন। আমাদের ভবিষৎ প্রজম্মের কথা চিন্তা করে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান চট্টগ্রামবাসীর আবেদনকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য।
চাকসুর সাবেক জিএস ড: জমির চৌধুরী চট্টগ্রামের সার্বিক চিকিৎসা সুবিধা, চিকিৎসা ও নার্সিং শিক্ষার বিষয় বিবেচনা করে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোন একটি স্থানে তথা কর্ণফুলির ওপারে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের জোর দেন এবং এটিকে সিআরবিতে হাসপাতালের নির্মাণের প্রস্তাবের বিকল্প স্থান হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, যারা সিআরবি এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতাল তৈরী করতে উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন, সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। চট্টগ্রামবাসী হাসপাতালের বিরোধীতা করে না। অত্যাধুনিক একাধিক হাসপাতাল যেখানে গরীব জনসাধারণের ফ্রী চিকিৎসার সুযোগ থাকবে তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু সেটির জন্য সরকারী আধা-সরকারী অব্যবহৃত অনেক জায়গা পড়ে আছে, যেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। তিনি ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে হেরিটেইজ এলাকা ঘোষিত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তটি বেআইনী বলে মন্তব্য করেন করেন এবং এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে সরকারী উদ্যোগে সিআরবি ছাড়া অন্যান্য স্থানে আধুনিক হাসপাতাল এবং মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন সহ বিভিন্ন ১০ দফা দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি আগামী কিছুদিনের মধ্যে ননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেওয়া হবে বলে জানান ।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য সাবিহা মুছা, চাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহেরুল হক শাহ চৌধুরী, চাকসুর সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন, সাবেক কমিশনার জেসমিন আকতার পারুল, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, কাতার আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার বাবু, চট্টগ্রাম সমিতি অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক সিটি কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ইফতেখার উদ্দিন ইফতু, সৈদী আরব থেকে ডা. নাহিদা খানম, নারী নেত্রী লাইলা ইব্রাহিম বানু ও কানিজ ফাতেমা লিমা, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ইয়ুথ ফোরামের আহ্বায়ক সাংবাদিক মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, সমাজসেবী জাহাঙ্গীর চৌধুরী, চাটার্ড একাউন্টটেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে মো. তাহের,, চট্টগ্রাম মহিলা চেম্বারের পরিচালক নুরজাহান সুলতানা রোজী, প্রাক্তন ছাত্র নেতা কাউসার ফারুক, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী গোলাপ রহমান, কাতার চট্টগ্রাম সমিতির এ এইচ এম হুসাইন প্রমূখ। এছাড়া ঢাকাস্হ চট্টগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাবুদ, ওমান থেকে বাংলাদেশ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কানাডা থেকে সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন, টিআইবির সাবেক রিজিওনাল ম্যানেজার এজিএম জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক কামরুল ইসলাম এবং অনেকেই এতে উপস্থিত ছিলেন ।
সভায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মনমুগ্ধকর দুইটি স্বরচিত প্রতিবাদী ছড়াপাঠ করেন ছড়াকার তসলিম খাঁ।
সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব গোলাম জিলানী মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।