
সংখ্যালঘু দু’ভাইয়ের ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট;
নেপথ্যের গডফাদার শাসক দলের নেতা;
নিজস্ব প্রতিবেদক: ৪০ লাখ টাকার জমি বিক্রি করে ১০ শতাংশ হারে ৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে সাতক্ষীরা শহরে ইটাগাছা এলাকার এক সংখ্যালঘু পরিবারের দুই সহোদরের কাছ থেকে। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিলেও মুখ খুলতে পারেনি ওই দুই সহোদর। শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে জমি বেচা-কেনা হলে এই সিন্ডিকেটকে চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নেপথ্য গডফাদার স্থানীয় শাসক দলের নেতা হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।
চলতি বছরের গত মার্চ মাসে শহরের ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা মৃত চিত্তরঞ্জনদের দুই ছেলে তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দে পলাশপোল মৌজার রেকর্ডিয় সম্পত্তি বিক্রয়ের ঘোষণা করে। ইটাগাছা এলাকার মাজেদ গাজীর ছেলে জমি বেচা-কেনার দালাল মনিরুল ইসলাম মনির সাথে তাদের রেকর্ডিয় জমি ৫ লক্ষ টাকা কাঠা দরে তুলসী ও হরিপদ তাদের স্বত্বদখলীয় জমি বিক্রি করতে সম্মত হয়। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হোতা ও জমির দালাল মনির অন্যতম প্রধান সহযোগী হল ফজলু ও মিজান। গত ১১ই মার্চ দালাল মনির মধ্যস্থতায় জমির মালিক তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দে ক্রেতা শহরে রাধানগর এলাকার বাসিন্দা ডা: রনজিত কুমার এর অনুকূলে ১২.৬০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়। একই দিনে এওয়াজ সূত্রে ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাবলু গং আরো তিন শতক জমি ডা: রনজিত কুমার রায়ের অনুকূলে রেজিস্ট্রি কোবলা করে দেয়। সর্বমোট ১৫.৬০ শতক জমির মূল্য ৪৭ লক্ষ ১২হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতা ডা: রনজিত কুমার রায় চেকের মাধ্যমে তুলসি কুমার দে ও হরিপদো দে কে ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। ঐদিন এওয়াজ সূত্রে তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দে এওয়াজ সূত্রে নেওয়া জমি বাবদ শফিকুল ইসলাম বাবু গং কে ২.৩০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিল লেখার কাজ সম্পন্ন করে। এই সুযোগে দালাল মনি তার নিজ নামে ৪.৬০ শতক জমির দলিল প্রস্তুত করে তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দের কাছ থেকে কূটকৌশলে স্বাক্ষর করে নেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। অপরদিকে বিক্রয়লব্ধ জমির টাকা পাওয়ার পর তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দের কাছ থেকে স্থানীয় সরকারদলীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জমির মালিক দুই ভাই মুখ খুলতে সাহস পায়না।
এরপর গত ২১ শে মার্চ ওই জমির মালিক দুই ভাই এওয়াজ সূত্রে নেওয়া শফিকুল ইসলাম বাবু গং অনুকূলে ২.৩০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে যায়। এই সুযোগে ধূর্ত মনি প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৪.৯৫ শতকের আরেকটি দলিল সৃষ্টি করে তুলসি কুমার দে ও হরিপদ দের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে জমির মালিক দুই ভাই উল্লেখিত জমি রেজিস্ট্রি না করে বাড়িতে চলে আসে। এরপর দালাল মনির কাছে রক্ষিত জমির কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্র ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট আন-রেজিস্ট্রি দলিল উদ্ধারের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করে। জিডি করার পর সদর থানার এসআই মানিক কুমার সাহা আন-রেজিস্ট্রি দুটি দলিল জব্দ করে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করেন। কিন্তু মনির কাছে আন-রেজিস্ট্রি একাধিক দলিল ও রেজিস্ট্রি কার্যে ব্যবহারের জন্য সাতক্ষীরা সোনালী ব্যাংকের কয়েকটি পে-অর্ডার সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র আটকে রাখার অভিযোগে হরিপদ দে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের পর নিজেকে রক্ষা করার জন্য শাসকদলের একাধিক নেতার কাছে দৌড় ঝাঁপ করছে বলে জানা গেছে।
জমি কেনা-বেচা ও দখল-বেদখলের ক্ষেত্রে এ দালাল ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অসাধু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে থাকে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তবে বর্তমান সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন যোগদান করার পর থেকে অসাধু ওইসব পুলিশ কর্মকর্তারা কিছুটা থমকে গেছে।