সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: ভেজাল মদ তৈরির পর সেবনকারী ক্রেতার বাসায়ও পৌঁছে দিচ্ছেন কারবারিরা। রেস্টুরেন্ট, বার ও ক্লাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে কারবারিরা ক্রেতাদের খুঁজে বের করেন। মোবাইল ফোনে ‘স্যার বিদেশি লাগবে’ বলে বিক্রির প্রস্তাব দেন। সবুজ সংকেত মিললেই মোটরসাইকেল বা গাড়িতে চেপে বোতল নিয়ে হাজির হন বাসার দরজায়। ভেজাল মদের এই ক্রেতার তালিকায় চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, অভিনেতাসহ শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও আছেন। প্রশাসনের নজরদারি না থাকার সুযোগে প্রতারকচক্র সহজে মদ পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছে। সম্প্রতি রাজধানীতে ভেজাল মদপানে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
গত সোমবার রাতে তেজগাঁও ও ভাটারা থেকে গ্রেপ্তার ছয়জনের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। যেখানে অনেক ক্রেতার নামই আছে। কারবারিরা দাবি করেছেন, নিয়মিত মদ কেনার কারণে এসব ব্যক্তি তাঁদের পরিচিত। ভেজাল মদ তৈরির দলের হোতা নাসির আহমেদ রুহুল আগে মদের বারে কাজ করায় তাঁর পরিচিত ক্রেতা রয়েছেন। সম্প্রতি মদের সংকট দেখা দিলে তাঁদের মাধ্যমে আরো ক্রেতা বেড়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, মদ তৈরির হোতা নাসির, কারিগর জাহাঙ্গীর আলম, সহযোগী মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ, রেদুয়ান উল্লাহ, সাগর বেপারী ও সৈয়দ আল আমিনকে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভেজাল মদ কিভাবে তৈরি এবং বাজারজাত হয় তা বের করেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি দাবি করছে, ঢাকায় আরো অনেকে এই অপকর্ম করছে। হোম ডেলিভারিতে মদ কেনা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিক্ষিত ক্রেতা। ঝামেলা এড়াতে অনেকে লাইসেন্স ছাড়াই ঘরে বসে মদ পান করতে চান। আবার কিছু পার্টিতেও প্রয়োজন হয়। সরবরাহ কম থাকায় ভেজাল দিতে শুরু করেন কারবারিরা।
গ্রেপ্তার কারবারিদের ভাষ্য, চকবাজার থেকে পচা পানি কেনা হতো। এরপর নিমতলী থেকে স্পিরিট কিনে অন্য উপকরণের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে বিভিন্ন বোতলে ঢোকানো হতো। পরে বড় সুঁই দিয়ে কর্ক লাগিয়ে মোমবাতি দিয়ে পুড়িয়ে সিলগালা করে বাজারে সরবরাহ করা হতো। বোতলগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লেবেল থাকায় এটা নিয়ে কেউ সন্দেহ করতেন না। তিন-চার মাস ধরে ভেজাল মদের কারবার করছে চক্রটি। ১৩ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে মাত্র। আর কথিত চিফ কেমিস্ট জাহাঙ্গীর আলমকে মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো।
ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল মদের উৎস খুঁজে বের করা। এটা ছিল অনেক কঠিন কাজ। কারণ যাঁরা নকল মদ কিনেছেন তাঁরা মারা গেছেন।