
সাওম বা রোযা ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম। এটা একটি শারীরিক ইবাদত। সমাজ জীবনে সাওম মানুষকে সংযমী করার পাশাপাশি নৈতিক ও আদর্শ সমাজ গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সবর বা ধৈর্য: ধৈর্য ও সহনশীলতার বাস্তব প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় রোযার মাধ্যমে। ধৈর্য, সহমর্মিতা, ত্যাগ -তিতিক্ষা প্রভৃতি গুণের উম্মেষ ঘটে রমজান মাসে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, “তোমরা ধৈর্য ও সালাত এর মাধ্যমে (আল্লাহর) সাহায্য প্রার্থনা কর।” (সূরা বাকারা)
মহানবী সাঃ বলেছেন, “রমজান ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।” ধৈর্য সামাজিক পরিমণ্ডলে এক অনন্য মূল্যবোধের সৃষ্টি করে।ফলে সমাজে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়।
ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি: রোযার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়।ধণী ব্যক্তি উপবাসের মাধ্যমে গরিবের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। একে অপরের সুখ-দুঃখ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়।মহানবী সাঃ বলেছেন, “একজন মুসলমান আর একজন মুসলমানের ভাই।”
সাম্য প্রতিষ্ঠা: ইসলাম যে সাম্যের ধর্ম রোযার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়। ধণী-দরিদ্র,আমির-ফকির,সবাই এক সাথে তারাবির সালাত পড়ে,এক সাথে ইফতার করে,একই সময় সেহরিতে উঠে।(যদিও এ বছর ভিন্ন প্রেক্ষাপট)। এতে সমাজের মধ্যে সাম্যের ছবি ভেসে ওঠে।
সদ্ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ: রোযা সমাজের অবহেলিত, দিনমজুর, অসহায় মানুষের প্রতি উদারতা ও সদ্ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। রাসুল সাঃ রমজান মাসে শ্রমিকের কাজ কিছুটা হালকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া রোযার মাধ্যমে মানুষের রাগ, ক্রোধ, হিংসা, লোভ ইত্যাদি নিবৃত থাকে ফলে মানুষ একে অপরের সাথে ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়।
আর্থিক উন্নতি: রোযার মাসে ধণীদের যাকাত, ফিতরা, দান, সাদাকাহ ইত্যাদির মাধ্যমে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের আর্থিক উন্নতি হয় এবং সমাজে ধণী ও দরিদ্রের আর্থিক বৈষম্য লাঘব হয়।
পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন: সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে রোজাদার লোভ-লালসা ও অন্যায় -অনিয়মের পরিবর্তে সততার উপর ভিত্তি করে জীবন-যাপন করে থাকে। এতে প্রতীয়মান হয়,সিয়ামই পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপনের প্রতিশ্রুতি।
নৈতিকতার বিকাশ: রোযার মাধ্যমে মানুষের নৈতিকতার বিকাশ ঘটে।একজন রোযাদার ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর স্মরণে থাকে। তাই সে যে কোনো অশ্লীল কাজ করতে ভয় পায়।
আদর্শ সমাজ গঠন: একটি আদর্শ সমাজ গঠনে রোযার ভূমিকা অসাধারণ। কেননা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ তাঁর ষড় রিপুর তাড়না থেকে পরিত্রাণ পায়।যার ফলে মানুষ লোভ-লালসা, কাম-বাসনা,ক্রোধ, নেশা,মিথ্যা, প্রতারণা এবং যাবতীয় অশ্লীলতার চর্চা থেকে পূত পবিত্র হয়ে একটি আদর্শ ও সুন্দর জীবনলাভ করে।
সর্বপরি এই আদর্শ ও সুন্দর জীবনের প্রভাব যে সমাজে পড়ে সে সমাজ একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ হিসাবে গড়ে ওঠে। সুুতরাং আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে রোযা (সাওম) এর শিক্ষা অপরিসীম।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলাম শিক্ষা, হাজী কেয়ামউদ্দীন মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ।

