বুধবার (২২ এপ্রিল) সর্বশেষ আক্রান্ত রোগীকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের পর বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ লকডাউন করা হয়েছে। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ডায়াবেটিক রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে করোনার লক্ষণ নিয়ে কোনও পেশেন্ট ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এটা ছিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
চিকিৎসকরা জানান, এই মাসের ১৪ তারিখে ৬৮ বছর বয়সের এক রোগী আইসিইউতে ভর্তি হন। আগে থেকে জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভোগার বিষয়টি রোগীর স্বজনরা গোপন করেন। সুগার কমে যাওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে রোগীকে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উনার কোভিড-১৯ টেস্ট করার পর তা পজিটিভ আসে। পরবর্তীতে বাকি সব রোগীর টেস্ট করানো হলে আরও তিনজন আক্রান্ত পাওয়া যায়। কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ আসা ৬৮ বছর বয়সের ব্যক্তি ভর্তি ছিলেন আইসিইউর ৫ নম্বর বেডে। এরপর ৬, ৮ ও ১০ নম্বর বেডের রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ’র এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উনার (আইসিইউতে প্রথম আক্রান্ত রোগী) গত ৮ এপ্রিল জ্বরসহ করোনার অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের আউটডোরে কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয় । তবে নেগেটিভ আসে। ৯ এপ্রিল এই রোগীর সুগার কমে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হার্টের সমস্যাও দেখা দেয়। তখন তাকে বারডেমের সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ১১ তারিখ ‘নিজ রিস্ক বন্ড’ দিয়ে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িযে নিয়ে যান স্বজনরা। পরে ১৩ তারিখ ওই ব্যক্তির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাকে ভর্তি করানো হয় বারডেমের কেবিনে। ১৪ এপ্রিল অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীকে ডায়াবেটিকসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত আইসিইউ রোগীদের সঙ্গে রাখার আগে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এক্সরে (ফুসফুসের অবস্থা জানতে) করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি নিতে দেরি হওয়ায় হাসপাতালটির সর্বোচ্চ অথরিটির পক্ষ থেকে ফোনকল আসে। রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে চাপ দেওয়া হয় বলে জানান সেখানকার একাধিক চিকিৎসক। ঊর্ধ্বতনের চাপে রোগীকে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ভর্তি করানো হয়।
কিন্তু ভর্তি নেওয়ার আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছে তার হিস্ট্রি জানতে চাওয়া হয়। তারা জানায়, বিএসএমএমইউতে এর আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু নেগেটিভ এসেছিল। তবে স্বজনরা, রোগীর করোনাভাইরাসের উপসর্গ এবং ইতালিফেরতের সংস্পর্শে আসার বিষয়টি গোপন করেন। আক্রান্তের ছেলে তাদের বলেছেন, আগে এমনিতেই টেস্ট করানো হয়েছিল। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ছিল না।
আইসিইউ’র এক চিকিৎসক জানান, ১৪ এপ্রিল ভর্তি হওয়া ৬৮ বছরের পুরুষ রোগীকে ১৬ তারিখ লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীর করোনা টেস্ট করতে নমুনা নিয়ে যায় বিএসএমএমইউ। পরদিনই রেজাল্ট আসে পজিটিভ। কিন্তু স্বজনরা তা চিকিৎসকদের জানাননি। পরে ২০ এপ্রিল বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিএসএমএমইউ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন ওই ব্যক্তির ফল পজিটিভ এসেছে।
বারডেমের চিকিৎসকরা জানান, পরবর্তীতে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, একজন রোগীর মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়ায় আইসিইউতে থাকা সব রোগীর কোভিড-১৯ এর টেস্ট করাতে হবে। ২১ এপ্রিল সব রোগীর স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়। ২১ তারিখ বিকালে আরও তিনজন আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়। এরপরই আইসিইউটি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া বারডেমে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মোট চারজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর সেখানে সেবা দেওয়া সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এবং পর্যায়ক্রমে সবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে।
বারডেম হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. নাজিমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই রোগী ছাড়াও আইসিইউতে পাঁচ রোগী ছিলেন। এদের তিন জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আর একজনের রিপোর্ট নেগেটিভ, অপর একজনের রিপোর্ট পেন্ডিং আছে।’ ডা. নাজিমুল জানান, আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে যেসব চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও পজিশন চেঞ্জার যারা রয়েছেন প্রত্যেকের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে।
বারডেমের একাধিক চিকিৎসক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না এই কারণ দেখিয়ে পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দেওয়া হয়নি। হাসপাতালটির আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক, নার্স, স্টাফসহ অন্যদের ২৫টি পিপিই প্রদান করা হয়। তবে এন-৯৫ বা এর কাছাকাছি মানের কোনও মাস্ক প্রদান করা হয়নি। এছাড়া যেসব পিপিই দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও নিম্নমানের বলে জানান তারা ।
সুত্র বাংলা ট্রিবিউন