নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ একাধিক জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত সাতক্ষীরার অস্ত্র, মাদক চোরাচালানের গডফাদার এবং হুন্ডি ব্যবসা তথা অপরাধ জগতের শীর্ষ গডফাদার জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আটককৃত আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিম দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে শীর্ষ চোরাকারবারী গডফাদার জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে গ্রেপ্তার পরবর্তী বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করেছে পুলিশ। মামলার বরাত দিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার তদন্ত ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর ৩৩ বিজিবি’র একটি টহল দল এক ট্রাক ভারতীয় মাছসহ মামুনুর রশিদ ও আকবর হোসেন নামের দুই জনকে আটক করে। আটককৃত ৬ হাজার ৪৫০ কেজি ভারতীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভোমরা স্থল বন্দর হয়ে নিয়ে আসা হয় বলে বিজিবি মামলায় উল্লেখ করেছে। জব্দকৃত ট্রাকসহ ভারতীয় মাছের মূল্য ১ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান,এ ঘটনায় সদর থানায় ৩০ ডিসেম্বর বিজিবি আলিপুর বাঁকাল চেকপোস্টের হাবিলদার মো. মোহসীন বাদী হয়ে আটক দুইজনসহ আরো কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫৮। ধারা ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্টস এর ২৫ বি (১) (বি)/২৫ডি। এই মামলায় আশিক এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারী আল ফেরদাউস আলফা ও তার সহোদর আব্দুল আলিমকে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ আটক করে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সাতক্ষীরার দেবহাটাসহ সীমান্ত এলাকার চোরাচালান জগতের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন আলফা ও আলিম। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ভারত থেকে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা, সরকারী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে পন্য আমদানী রপ্তানী সহ নানাবিধ অভিযোগ। রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক সহ চোরাচালানের মামলাও। এর আগে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গডফাদার অল ফেরদাউস আলফাকে গ্রেপ্তার করেছিলো সেনা সদস্যরা। আলফা মাদক মামলায় ইতোপূর্বে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কয়েক মাস জেলে যায়। পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধের রামরাজত্ব কায়েমে মেতে ওঠে। বিভিন্ন ব্যাংকে আলফার নামে বে-নামে রয়েছে কালো টাকার পাহাড়। জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার বিলাস বহুল একাধিক বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেবহাটার কুলিয়া মাছের আড়ৎ ও পারুলিয়ার গরু হাটটিও প্রতিবছর দ্বিগুন টাকা দিয়ে ইজারা নেয় আলফা। গরু হাটের পাশেই রয়েছে কোটি টাকা মুল্যের আলফার মাল্টিষ্টোরেড বাড়ী। পারুলিয়াতে রয়েছে সাজিদ এন্টারপ্রাইজ নামের আরো একটি মোটর সাইকেলের শোরুম। আলফার কালো টাকার পাহাড়ে দীর্ঘ সময় ধরে বেশ তটস্থ ও নিরব অবস্থানে ছিলো স্থানীয় প্রশাসন। তার ভাই আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে ইতোপুর্বে রয়েছে জেলার চাঞ্চল্যকর বিজিবি সদস্য আব্দুল জব্বাব হত্যা মামলা। টানা দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ভারত থেকে অস্ত্র ও ফেন্সিডিলের চালান বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ সহ বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ সহ মুল্যবান বিভিন্ন মালামাল ভারতে পাচার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত জেলার শীর্ষ চোরাকারবারী গডফাদার হয়ে উঠেছিলো আলফা ও আলিম। কুলি থেকে কোটিপতি আল ফেরদাউস আলফা নিজের অপরাধ কর্মকান্ডকে আড়াল এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সর্বশেষ জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে নিজের ভিতকে শক্ত করে তোলে। মঙ্গলবার বিকালে শীর্ষ চোরাকারবারী আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে দেবহাটা সহ আশপাশের এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমনকি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করছে আলফা’র নিজ গ্রাম কোমরপুরের সাধারন মানুষ।
সাতক্ষীরার অপরাধ জগতের গডফাদার আলফা-আলিম গ্রেফতার : জনমনে স্বস্তি
পূর্ববর্তী পোস্ট