
নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলা জুড়ে বেড়েছে মাদক ব্যাবসায়ী ও অনলাইণ জুয়ার এজেন্টদের দৌরত্ব ।ফলে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ মাদক ও অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোর এবং তরুণরা । মাদকগ্রহণের সহজপথ তৈরি করেছে হাতের নাগালে পর্যাপ্ত মাদক সরবারহ থাকায়। প্রতিনিয়ত মাদকসেবনের ফলে মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ । প্রথমে পরিবার থেকে টাকা নিয়ে মাদক সেবন শুরু করলেও একপর্যায় পরিবার মাদকের টাকা যোগান না দিতে পারায় তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে চুরি ছিনতাই সহ নানা অপরাধ মূলক কাজে । প্রশাসনের তৎপরতা উপেক্ষা করে বেড়েছে মাদক সরবারহ । জেলায় পর্যাপ্ত মাদক যোগান থাকায় সেবনকারীদের মাদক গ্রহণ বেড়ে চলেছে। মাদকগ্রহণের ফলে অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোররা গড়ে তুলছে কিশোর গাং প্রতিনিহত জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সংঘাতে। সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গ্রাম মহল্লায় রাত হলেই চেতনানাশক স্প্রে করে চুরি ডাকাতির মত ঘটনা ঘটে চলছে। রাত হলে জেলা জুড়ে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে । আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলেও তবুও থেমে নেই মাদক ব্যাবসায়ী এবং অনলাইণ জুয়ার এজেন্টদের দৌরত্ব । সীমান্ত জেলা হওয়ায় ভারত থেকে অবৈধ ভাবে মাদক প্রবেশ করানো যায় সহজেই । সাতক্ষীরা সীমান্তের মাদক সরবারহ প্রধান রুট হিসাবে পরিচিত শ্যামনগরের রমজানগর – কৈখালী সীমান্ত, কালিগঞ্জে বসন্তপুর – খানজিয়া সীমান্ত, দেবহাটার টাউন শ্রীপুর-শাখরা কোমরপুর সীমান্ত , সদরের বৈকালি, ঘোনা,ভোমরা সীমান্ত ও কলারোয়ায় কুশখালী,কাকডাঙ্গা তলুইগাছা সীমান্ত।অধিকাংশ সময়ে বিজিবির অভিযানে মাদক কারবারীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকরে জামিনে বের হয়ে আবার মাদককারবার পরিচালনা করে। এজন্য বাংলাদেশের প্রচলিত মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন দায়ী বলে দাবি করেছে একাধিক আইনজীবীরা। সাতক্ষীরার মাদক কেনাবেচার অভায়রণ্য পয়েন্ট পরিচিত যেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে । স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ,সদরের পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা এলাকা, আলীপুর, ঝাউডাঙ্গা, ভোমরা , কালিগঞ্জ বিষ্ণুপুরের বন্দকাটি কৃষ্ণনগর, খানজিয়া,পূর্ব নলতা, বসন্তপুর, মৌতলা,
দেবহাটার পদ্ম শাখরা, কোমরপুর, টাউন শ্রীপুর ,শ্যামনগরের ব্যাসষ্টান্ড সংলগ্ন এলাকা, মুন্সিগঞ্জ,ভেটখালী, কৈখালী, রমজানগর, আশাশুনির শ্রীউলা, প্রতাপনগর,কাপসান্ডা,খাজরা, পাটকেলাঘাটার যুগীপুকুর বিশ্বাস বাড়ী এলাকা, পাটকেলঘাটা কলেজ মোড়, পাটকেলঘাটা ওভারব্রীজ, তালার শশ্মান এলাকা ও কলারোয়ায় জয়নগর, কেড়াগাছি,কাকডাঙ্গা তলুইগাছা সহ একাধিক এলাকায় মাদক বিক্রি হয়। এসব অঞ্চলের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা একাধিকবার মাদকসহ ধরা পড়লেও তাদের ওপর মহলে বিভিন্ন ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সাথে যোগসাজশ থাকায় বহাল তবিয়তে তারা ব্যবসা করে যাচ্ছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ও পুলিশের ভাস্যমতে জেলার চিহ্নিত মাদক কারবারীরা হলেন, সদরের বাটকেখালী ঋষিপাড়ার মাহবুব,সুলতানপুর বাজারের আক্তার, কালিগঞ্জের বন্দকাটি মাদক সম্রাট ডিলার ওবায়দুল্লাহ গাজী ও ইমামুল, মহৎপুরের মোশারুল, উজিলপুর বাজারে কায়ুমের পুত্র রাজু, ফারুক, ফিরোজ, চাঁদখালীর বাবলু, বাক্কার মেম্বার, ভোমরা এলাকার কবির , মিজানুর , বাবু, আব্দুর রউফ ভোদি, পাটকেলঘাটার যুগীপুকুর বিশ্বাসবাড়ী এলাকার আরিফুল ইসলাম টগর, ময়নুল কারিকর, বাবু কারিকর, দেবহাটার আসাদুল চেয়ারম্যান পুত্র শাওন সহ অনেকে।
জেলার অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা হলেন, আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার রাহানুল ইসলাম রাহাত , ধ্রুব দাশ ,রাজা, সাজু কালিগজ্ঞ এলাকার রিপন, সাতক্ষীরা শহরে ইনফিনিটি শোরুমের ম্যানেজার রুহুল আমিন কাটালতলা এলাকার আকাশ দীপ ,শুভ ।
এসব মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা,হিরোইন, ফেনসিডিল গাজা, বিভিন্ন ক্যামিকাল ভারত থেকে এনে মজুদ করে। পরবর্তীতে এসব মাদক খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোর ও যুবকদের হাতে। মাদকের রুট নিরাপদ ও সহজলভ্য হওয়ায় নেশাগ্রস্তর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইন জুয়া। যারা মাদক সেবন করে অধিকাংশ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। প্রতিদিন মাদক সেবন ও অনলাইন জুয়া খেলে নিংস্ব হচ্ছে তরুণ যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মাদক ও অনলাইন জুয়ার টাকা যোগান দিতে জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই চুরি ডাকাতির মত ঘটনায় ।আর এসব জুয়ার অধিকাংশ টাকা লেনদেন হয় , সিটি ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ।
নাম না জানানোর শর্তে মাদক ও অনলাইন জুয়ায় আসক্তধারীর একজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান প্রথমে সিগারেট খেত। শুরুতে মারধর করতাম চেষ্টা করতাম থামানোর কিন্তু পরবর্তীতে গাঁজা সেবন করে এখন ইয়াবা ছাড়া তার দিনচলে না। নেশার টাকা না দিলে মারপিট করতে আসে। সন্তান নেশাগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ মাদক হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায়। হাত বাড়ালে মেলে মাদক যার কারণে তাদের নেশাবৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন মাদক ও অনলাইন জুয়ায় জন্য টাকা দিতে হয় না হলে আমাদের কে মারপিট করতে আসে।
কালিগজ্ঞ এলাকার ময়নুল ইসলাম বলেন, অনলাইন জুয়া ও মাদকে ভয়াবহ আসক্ত আামার সন্তান।দিনভর অনলাইনে জুয়া খেলে নেশা ও জুয়ার টাকা জোগাড় করতে মায়ের স্বর্ণ চুরি করে বিক্রি করেছে ।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সহ -সভাপতি অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, মাদকের ভয়বহতা ছড়িয়ে পড়েছে উঠতি বয়সী কিশোর তরুণদের মাঝে। মাদক গ্রহণের ফলে তারা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে যার ফলে নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এখন ১৫ বছরী কিশোরা মাদক সেবন করে প্রকাশ্যে পাশাপাশি অনলাইন জুয়া তো আছে। মাদক ও অনলাইন জুয়ার টাকা জোগাড় করতে পিতা মাতাকে মারধর করছে আমরা দেখছি এমন ঘটনা ।টাকা না পেয়ে কিশোর গাং তৈরি করে ছিনতাই- ডাকাতি করছে। প্রশাসন যদি জোরালে অভিযান না নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে তাহলে আগামীর যুব সমাজে মাদকে ধাবিত হবে এদের কে ঠেকানো যাবে না এরা দিন দিন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।আমি চাই সেনাবাহিনী মাদক ব্যবসার রুট গুলো অভিযান দিক মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করুক। আইনে ফাক ফোঁকরে সহজে জামিন না লাভ করে আদালতের সাথে কথা বলুক।তাহলে এই মাদক নির্মূল করা যাবে।
সাতক্ষীরা জজকোর্টর আইনজীবী আল মাহমুদ পলাশ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কিছু জটিলতা আছে যার ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা জামিন লাভ করে। মূলত স্বাক্ষ্য দূর্বল হওয়ায় জামিন লাভ করে থাকে।জেলা দায়রা আদালতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনীরা আলোচনা সাপেক্ষে বিবেচনা করে মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন না হওয়ায়র বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে।
জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক বিজয় কুমার মজুমদার বলেন,মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান পরিচালিত আছে। আমরা প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরছি ।পর্যায়ক্রমে সাতক্ষীরার সকল যায়গায় অভিযান চলবে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদক ও অনলাইন জুয়ার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করছি আমরা। মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না।তার পাশাপাশি জনগনকে সচেতন হতে হবে।মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ।
সাতক্ষীরা -৩৩ ব্যাটেলিয়ান বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশরাফুর হক জানান, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে । প্রতিনিয়ত বিজিবির অভিযানে মাদক সহ ভারতীয় মালামাল আটক করা হচ্ছে । আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেস্টা করছি মাদক এবং চোরা চালান প্রতিরোধ করার ।