
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রের উপর হামলার ঘটনায় ১৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে কলেজের শিক্ষকদের কক্ষ থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটক হয়েছেন ৫নং বড়দল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ রানা বাবু, তার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছিন আলী, জাহিদুল গাজী, মুরাদ সানাসহ ১৩ জন।
বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাষক জানান, কলেজ মাঠে বেলা ১১টার দিকে কলেজ ছাত্র লিখন ইসলামকে প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে কলেজ মাঠে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নাহিদ রানা বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় মাঠের পাশে কাজে নিয়োজিত থাকা শ্রমিকরাসহ স্থানীয়রা ঘটনাটি দেখার পর উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় নিজেদের বাঁচাতে ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মীরা কলেজের শিক্ষকদের রুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, পরে ঘটনাটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ সিহাবউদ্দীন আশাশুনি থানা পুলিশকে অবহিত করে। এরপর আশাশুনি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যায়। আটক হওয়া এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মানুষদের পকেটে গাজা ঢুকিয়ে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। কিছুদিন পূর্বে কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক প্রবীর বৈরাগীকেও মারপিট করেছিল।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, নাহিদ রানার নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত কলেজ অধ্যক্ষ সহ বিভিন্নজনের কাছে নানান ধরনের অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাদাবী সহ চাঁদাবাজী করে আসছিল। বড়দল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ রানা বাবুর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় মহব্বত ঢালী, বিষ্ণু ময়রা, জোসেফ সিংসহ ১৬ জনের কাছ থেকে সে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের চাঁদা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তার অত্যাচারে মহব্বত ঢালী এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান যুবলীগ নেতা তৌহিদ সানাকে পিটিয়ে হত্যার মামলা রয়েছে।
নাহিদ রানা গ্যাংয়ের কাছে বিশেষ করে বড়দল এলাকার প্রায় সব প্রতিষ্ঠান জিম্মী। প্রতিদিন চলে তাদের নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজিই তাদের নেশা ও পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ সব সময় ভীত সন্ত্রস্থ। সন্মানহানি ও মারপিটের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুলতে সাহস পায় না। এলাকায় নাহিদ রানা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। বড়দল এলাকায় মুকুটহীন সম্রাট নাহিদ রানা। তার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কাউকে পরোয়া না করেই দাপটের সাথে এলাকায় তার রাজত্ব। আশাশুনি উপজেলার এক প্রভাবশালী সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে তার সব অপকর্ম চলে। যে কোন অপরাধ কর্মকান্ড করেই প্রতিবারই স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে সে পার পেয়ে যায়।
আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ সিহাবউদ্দীন জানান, এ ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার বিষয়ে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, কলেজ ছাত্রকে মারপিটের ঘটনায় ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।