
মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব চরণদ্বীপে গত ১৫ই মে ২০২০ইং তারিখে রাত ১১ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাধীন চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী ডাকাত, মাহালম বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন ও তার পরিবার পরিজনের উপর স্বশস্ত্র হামলা হয়। হামলাকারীদের গুলিতে ঘটনাস্থলে মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের বড় ছেলে নাছির নিহত হওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের বাম পা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের ছোট ছেলে লোকমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যাপক মারধর করে গুরুত্বর জখম করে সন্ত্রাসীরা।
চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাহালম বাহিনীর আত্যাচারে পুরো বোয়ালখালী তথা চরণদ্বীপবাসী অতিষ্ঠ। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর বিভিন্নসময় ভিন্নভাবে হামলা করে। মাহালম বাহিনীর প্রধান সন্ত্রাসী মাহালমসহ সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও মাহালমকে গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসির দাবীতে বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে আজ ৩রা জুন ২০২০ইং তারিখ বেলা ১২ টার সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো: হারুন মিয়া লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান যে, মাহালম বাহিনীর নেতৃত্বে ১৫/০৫/২০২০ইং রাত ১১টায় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আলী মদনের পূর্ব চরণদ্বীপস্থ সন্ত্রাসী মাহালম, ক্রসফয়ারে নিহত ছইল্লা, মো: জসিম, হাছি মিয়া, মো: তৌহিদ, নাছির উদ্দিন, মো: নাছের ৬-৭জন অস্ত্রধারী নিয়ে বসতঘরটি ঘিরে এলোপাথারী গুলি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘরের সামনের দরজার সম্মুখে দাড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মো: নাছির নিহত হন। নাছির গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের দিকে এগিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনকেও গুলি করে। গুলিতে আলী মদনের বাম পা ঝাজরা হয়ে যায়। ঐ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মদন আলী এখনও পঙ্গুত্ব বরণের মত জীবন যাপন করছে। সন্ত্রাসীরা ঐ সময় জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে টানা হেচড়া করে আলী মদনের ছোট ছেলে মো: লোকমানকে ঘরের বাহিরে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী মারধর করে সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মদনের ছেলে লোকমান। গোলগুলির শব্দ শুনে এলাকার জনগণ চারদিক থেকে এগিয়ে আসলে মাহালম বাহিনীর স্বসস্ত্র ক্যাডারগণ গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নিহত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান নাছির উদ্দিনের পরিবার ও এলাকাবাসির সহযোগিতায় চায়। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র সহ ২ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় সুনির্দিষ্ট হত্যা ও হামলার মামলা দায়ের হয়। এই ঘটনায় সর্বস্থরের এলাকারা নিরিহ জনগণ আতঙ্কে দিনযাপন করছে লিখিত বক্তব্যে জানান।
হামলায় আহত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন ও তার ছোট ছেলে মো: লোকমান মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ে দিন অতিবাহীত করছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, সন্ত্রাসী মাহালম তার বাহিনী নিয়ে এলাকায় স্বসস্ত্রে প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করছে। মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের পরিবার পুন:রায় হামলার আশঙ্কা করে ভয়ভীতির মধ্যে দিনযাপন করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান যে, এই মাহালম বাহিনীর বিগত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী রাত ১০টার সময় বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর গ্রামের আরেক মুক্তিযোদ্ধা শওকতের বাড়িতে ব্যাপক গোলাগুলির মাধ্যমে সন্ত্রাসী তান্ডব চালায়। ঐসময় ঘটনাস্থলে মুক্তিযোদ্ধা শওকতকে না পেয়ে তার বাড়িঘর ভাংচুর করে। ঐ সময় ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে মাহালম বাহিনীর শাস্তির দাবিতে বোয়ালখালীর বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রহস্যজনকভাবে মাহালম বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করে।
মাহালমকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই বাহিনী পুনরায় আলী মদনের পরিবারের উপর এই বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ছেলে নাছিরকে হত্যা করে। এই মাহালম বাহিনীর বিরুদ্ধে বিগত ৭বছর যাবৎ চরণদ্বীপ, খরণদ্বীপ ইউনিয়নসহ আশপশের এলাকার নিরীহ নির্যাতিত মানুষেরা বোয়ালখালী থানায় অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সমূহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাহালম তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। মাহালমের মাদক ব্যবসা অস্ত্রভাড়া দেওয়া এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, কর্ণফুলী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্ত্বলনের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন কোননা কোন কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম ও মাহালমের মধ্যে এলাকার আধিপত্ত্ব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মতবিরোধ চলে আসছে। উভয়ে সন্ত্রাসী কর্ম কান্ডের সাথে জড়িত। তাদের দু’জনেরই সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এলাকার মানুষেরা দু’বাহিনীর চাঁপের মুখে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা মদনের পরিবারের উপর হামলা এবং হামলায় গুলিতে নাছির নিহত হওয়া ঘটনা পূর্বের আধিপত্ত্বের বর্হিপ্রকাশ। মাহালম বাহিনীর প্রধান মাহালমকে গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে আরও অসংখ্য নাছিরের প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাব প্রধান, ডিআইজিসহ প্রশাসনের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাহালম বাহিনীর প্রধান মাহালমসহ সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলে বোয়ালখালী সচেতন নাগরিকদেরকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। অবিলম্বে মাহালমকে আটকপূর্বক বিচারের ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা বন গোপাল দাশ, মুক্তিযোদ্ধা শরৎ চন্দ্র বড়–য়া, মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন প্রমুখ।