অনলাইন ডেস্ক: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দুটি দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে একমত হতে পারেনি বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের পাঁচটি অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে সরাসরি উচ্চারণ করা হয়েছে এবং এই পাঁচটি অবস্থান থেকে ভারত কোনো ভাবেই সরে আসবে না বলেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের যে পাঁচটি সুস্পষ্ট বক্তব্য তার মধ্যে রয়েছে:
১. দুই দেশের সম্পর্ককে তারা আরও গতিশীল এবং উত্তরোত্তর আরও এগিয়ে নিতে চায়: বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক গত ১৫ বছরে অত্যন্ত ভালো বলে ভারত মনে করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দেশ পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অস্বস্তির জায়গা কাটিয়ে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গায় এসেছে। ভারত সব সময় মনে করে যে দুই দেশের স্বার্থের জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশীই প্রথম এই নীতিতে নরেন্দ্র মোদি সরকার কাজ করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সেটির ব্যাপারে ভারত কোন রকম ছাড় দেবে না।
২. বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার: ভারত মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেই নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে না করবে সেটি সেই দেশের রাজনৈতিক বিষয়। তবে ভারত এ বিষয়ে একমত যে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত এবং এই নির্বাচনে যেন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে সে ব্যাপারেও সকলের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এটি ভারত প্রত্যাশা করেন।
৩. বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত মাথা ঘামাচ্ছে: ভারত সুস্পষ্টভাবে মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা অতিরিক্ত এবং বাড়াবাড়ি। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়, যেটি ভারত কখনও চায় না এবং ভারতের প্রত্যাশিত নয়।
৪. বাংলাদেশে যেন জঙ্গিবাদ, উগ্র মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে: ভারত সব সময় মনে করে যে বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকে এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় তাহলে এ দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটবে। এটি ভারতের জন্য বিপজ্জনক। ভারত অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে যে, যখনই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তারা মদদ দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং তাদের মাধ্যমে ভারতের অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ভারতের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। ভারত সে রকম পরিস্থিতি বাংলাদেশের সৃষ্টি হোক তা কখনই চায় না এবং এটা হতেও দেবে না।
৫. বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব: ভারত মনে করে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেতৃত্ব বাংলাদেশে নাই এবং এই নেতৃত্ব এই মুহুর্তে না থাকার কারণে তার বিকল্প নাই। এ কারণে তারা বাংলাদেশের স্বার্থেই শুধু নয়, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং অখণ্ডতার স্বার্থে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আস্থাশীল। তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বটে, কিন্তু পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা থাকুক সেটা খোলামেলা ভাবেই পরিস্কার করে। ভারত মনে করে যে, শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা দল ক্ষমতায় এলে দুই দেশের সম্পর্করই শুধু ক্ষতি হবে না, সাথে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট হবে। জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিরও উত্থান ঘটবে। এটি ভারত কখনই হতে দেবে না।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যে পাঁচটি বার্তা দিল ভারত
পূর্ববর্তী পোস্ট