
#বদলি আদেশ স্থগিত হয়নি, ২মার্চ রবিবার দ্বায়িক্ত বুঝে দিয়ে নতুন কর্মস্থল কুষ্টিয়াতে যাওয়ার কথা নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের
#আজ দ্বায়িক্ত বুঝে দিচ্ছিনা। আরো কিছুদিন থাকছি। বিষয়টি আমার কর্তৃপক্ষ জানেন -নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম
#বদলীর আদেশের দিন থেকে ১৪দিন অর্থাৎ ২ মার্চ পর্যান্ত সাতক্ষীরায় থাকতে পারবেন শহিদুল ইসলাম- প্রধান প্রকৌশলী
হাবিবুর রহমান/কিশোর কুমার: গেপালগজ্ঞের নামে চলা প্রতাপশালী সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে দূনীতির দায়ে বদলী করার পর দ্বায়িক্ত বুঝে না দিয়ে গতকাল রবিবার ্ও অফিস করেছেন প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। জেলা বি এন পির এক শীষৃ নেতা ও ঢাকার এক সমন্ময়ককে ধরে বদলী আদেশ স্থগিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন শহিদুল ইসলাম। ঘটনাটি সাতক্ষীরার এখন টক অফ দা টাউন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি প্রকল্পের নামে দীর্ঘ চার বছরে সাতক্ষীরায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের পর নড়ে-চড়ে বসেছে কর্তপক্ষ। পাহাড়সম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে চলতি মাসের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামকে অফিস আদেশে কুষ্টিয়া জেলায় বদলি করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে বদলী হল্ওে থেমে নেই তার দৌরত্ব ।গতকাল রবিবার ২মার্চ বিকালে সাতক্ষীরার সাবেক কর্মস্থলে বসে বদলী ঠেকাতে রিতিমত বিভিন্ন মহলে তদ্বির করতে দেখা গেছে তাকে। তারই অপকর্মে সহযোগিতা করেন তারই অফিসের ক্যাশিয়ার শাখাওয়াত হোসেন। টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যশোরের নিউ মার্কেট এলাকায় ৫ তলা বাড়ি সহ বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীসহ বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে বহু সম্পত্তি কিনেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালে ২০ মে সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্যের নির্বহী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন শহিদুল ইসলাম। এরপর থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন লুটপাটের মহাযজ্ঞে। গত ২০২০ -২১ অর্থ বছরে সুপেয় পানির জন্য সারাদেশে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা খরচ করে হাতে নেয় বিগত আওয়ামীলীগ সরকার। এর মধ্যে ৭ টি প্যাকেজে ২‘শত ১২ কোটি বরাদ্ধ হয় উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরার জন্য। প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে রেইন ওয়াটার হারবেষ্ট, গভীর নলকুপ, সাব মার্সেবল পানির পাম্প। প্রকল্পটির শুধু মাত্র গরীব আর পিছিয়ে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিরাপদ পানি দেওয়ার জন্য ছিল। কিন্তু বরাদ্ধের ২শত কোটি টাকা অপচয় করে অনিয়মের মাধ্যমে লাভবান হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জেলার সাতটি উপজেলায় সুপেয় পানি সংকট নিরসনে সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয় জেলা সমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে প্রকল্পে ৩ হাজার লিটারের পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ বিতরণ করা হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় সরকারের উপকারভোগীরা প্রতিটি ট্যাংকে ব্যায় প্রায় ৪২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ)। তবে সরকারী এ প্রকল্পে গ্রাহক প্রতি ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষদের বাদ দিয়ে সমাজের স্বচ্ছল চাকরীজীবীদের কাছে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন এসব ট্যাংক বলে অভিযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের। এই অনিয়মের সাথে স্থানীয় জন প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগ সাধারন মানুষের।
তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবী স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তালিকা পাওয়া গেছে সেই তালিকা অনুযায়ী ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে কোন দূর্নীতির কোন সুযোগ নেই বলে।
উপকূলের বাসিন্দারা জানান, শুনেছি সরকার থেকে তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি দেয়। সরকারী বরাদ্ধ তো স্বপ্নের মত। পানির সমস্যা নিয়ে এরপর স্থানীয় মেম্বরদের কাছে গেলে দিতে হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। দু:খের বিষয় হল পানির ট্যাংকি গরীব অসহায় মানুষ না পেয়ে এলাকার বিত্তবানরাই পাচ্ছেন। তারা ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করছেন সরকারি ট্যাংক। আর এসব ট্যাংকি তারা ব্যবহার করছেন গরুর গোয়াল আর মুরগীর খামারে।
নির্বাহী প্রকৌশলীর পাতানো টেন্ডারে তার নিকট আত্মীয় থেকে বন্ধুদের মধ্যে পাইয়ে দিতেন। পাশাপাশি এসব টেন্ডারের সব ঠিকাদারীর কাজ নিজে করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম। এজন্য বদলীর পরে ও কর্মস্থল ছাড়ছেন না তিনি। জেলা বিএনপির এক নেতা ও ঢাকার এক সমন্বয়ককে ধরে আগামী জুন অথবা ঈদ পর্যন্ত সাতক্ষীরা থাকতে চান তিনি। এজন্য কোটি টাকার মিশনে নামা নির্বাহী প্রকৌশলী স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদেরও বস করার পায়তারা চালাচ্ছেন। এ কাজে তাকে সহয়তা করছেন হিসাবরক্ষক শাখাওয়াত হোসেন।
নাম না জানানোর শর্ত দিয়ে সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক এক প্রকৌশলী জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরায় যোগাদানের পর অফিসকে দূনীতির এক অভয়অরন্যে পরিনত করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানির বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে অফিসের সকল ঠিকাদারদের জিম্মি করে ফেলেছিলেন। ৩ থেকে ৪% কমিশন না দিলে কোন ঠিকাদার পেতনা কোন প্রকল্পের কাজ। এছাড়া নিজের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে টেন্ডার নিয়ে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইতিমধ্যেই। নিজের আত্মীয় পরিচয়ে প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ করত কামাল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে।
দূর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কামাল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, অফিস থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ট্যাংকি বিতরণ করছি। যদি কিছুু বলার থাকে তাহলে অফিসে কথা বলেন।
খুলনা সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী জানান, ২ মার্চ রবিবার তার দ্বায়িক্ত বুঝে দেওয়ার কথা। তার বদলীর আদেশ স্থগিত হয়নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয় নতুন কর্মস্থল কুষ্টিয়াতে যাচ্ছেন কবে? উত্তরে তিনি জানান, আরো কিছুদিন সাতক্ষীরা থাকব। বিষয়টি আমার কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন।
এদিকে জনস্বাস্থ্যের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বদলীর আদেশের দিন থেকে ১৪ দিন অর্থাৎ ২ মার্চ পর্যান্ত সাতক্ষীরায় থাকতে পারবেন শহিদুল ইসলাম। এরপর তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে।
জনস্বাস্থ্যের প্রধান প্রকৌশলী বলার পরও সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম দ্বায়িত্ব বুঝে না দিয়ে পূর্বের কর্মস্থলে কাজ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।