
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়নের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের পাহাড়। পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতির কারণে এখানে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, অফিসের তহশিলদার, অফিস সহকারী, পিয়ন সবাই ‘ঘুষ বাণিজ্যের’ সঙ্গে কম বেশি জড়িত। অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে এই অফিসকেন্দ্রিক শক্তিশালী দালালচক্রও গড়ে উঠেছে।
গত কয়েক দিন কুশুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘুরে জমির মালিক ও সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব (নামজারি), মিস মামলা, খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এখানে ঘুষ লেনদেন হয়। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা সেবাপ্রার্থীদের অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুষের অঙ্ক নির্ধারণ করে দিচ্ছেন অফিসের পিয়ন। ঘুষ ছাড়া প্রায় কোনো কাজই হচ্ছে না সেখানে। গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে উঠে আসে ওই অফিসের ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র। ভূমি অফিসের বারান্দায় চেয়ার ও টেবিল নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় পিয়ন আলমগীর হোসেনকে।
এসময় ৩৫ শতক জমি মিটিশন করতে আসেন কুশুলিয়া ইউনিয়নের কলিযোগা গ্রামের মোতালেব হোসেন। তার কাছে মিটিশন খরচ বাবদ ৭ হাজার টাকা দাবি করেন আলমগীর হোসেন। এসময় মোতালেব ইসলাম বলেন টাকা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। পিয়ন আলমগীর হোসেন বলেন এর চেয়ে কম খরচে আপনার মিটিশন করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। টাকা জোগাড় করে পরে মিটিশন করবেন জানিয়ে ভূমি অফিস থেকে চলে যান মোতালেব হোসেন।
পরবর্তীতে দেখা যায় কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রাম এলাকার শেখ ইব্রাহিম হোসেন জমির মিটিশন করার জন্য কথা বলেন ওই পিয়নের সাথে। ৪৫ শতক জমি মিটিশন খরচ বাবদ সাড়ে ৬ হাজার টাকা চান পিয়ন আলমগীর হোসেন। এসময় সেবা গ্রহীতা জানতে চান এত টাকা লাগে নাকি মিটিশন করতে। উত্তরে পিয়ন বলেন অতিরিক্ত টাকা ছাড়া ভূমি অফিসের কোন কাজ করা সম্ভব হয়না।
গভীর চিন্তিত হয়ে পিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেবা গ্রহীতা ইব্রাহিম। এসময় সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদক পিয়নের কাছে জানতে চান মিটিশন করার জন্য বিঘা প্রতি কত টাকা খরচ হয়। সহজে তিনি উত্তর দেন ৩ বিঘা জমির জন্য তাদের অফিস খরচ ৭ হাজার টাকা। এছাড়া ৩ বিঘা জমির বেশি হলে ১২ হাজার টাকা। এসময় সরকারি খরচ কত জানতে চাইলে ১১৭০ টাকা বলেন তিনি। কৌতূহল বশত প্রতিবেদক বলেন তাহলে এত কেন নিচ্ছেন বাকি টাকা কোথায় যায় । তিনি বলেন আপনি বুঝবেন না এই টাকার বড় অংশ নায়েব সাহেব, উপজেলা ভূমি অফিসের পোস্ট সার্ভেয়ার ও বড় বাবুকে দিতে হয়। প্রতিবেদক জানতে চান তাহলে আপনার কত টাকা থাকে প্রতি মিটিশনের জন্য। স্বাচ্ছন্দ্যে তিনি বলেন ৫’শ টাকা। এসময় তিনি আরো বলেন আজ পাঁচটা জমির মিটিশন করেছি কারো কাছ থেকে ৭ হাজার কারো কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নিয়েছি।
কথাপোকথন শেষে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আলমগীর হোসেন হাতজোড় করে বলেন তার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো সরকারি নির্ধারিত ফি ছাড়া কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা আদায় করবেননা।
বিষয়টি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জানতে চাইলে কুশুলিয়া ইউনিয়ন (ভূমি) কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন বলেন, মিটিশনের জন্য ১১৭০ টাকা জমা দিতে হয় এর বেশি একটি টাকা কারো কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়না। এছাড়া তার অফিসের পিয়নের কাছ থেকে তিনি অবৈধ কোন টাকা গ্রহণ করেননা। দেওয়ালের বাইরে পিয়ন সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন সেটা তিনি জানেন না।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, কুশুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য চলছে সে বিষয়ে তিনি অবগতনন। ওই অফিসে কোন ব্যক্তি অথবা দালাল চক্র যদি ঘুষ বাণিজ্যে সাথে জড়িয়ে থাকেন। তাহলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।