
বিশেষ প্রতিবেদক,তালা: সাতক্ষীরার তালা সদরের শাহপুর গ্রামের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি আবারও জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১৩ জুন) সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কুপিয়ে আহত করা হয়েছে শাহিন গাজী নামের একজনকে। এর আগে শনিবার (১২ জুন) বিকেলে জমি দখলের হুমকি দেন তালা থানার সাবেক ওসি তদন্ত মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে, এনায়েত গাজীর ছেলে শাহিন গাজী, সেলিম গাজী ও বোন ফরিদা বেগম। তালা থানার সাবেক ওসি তদন্ত মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ বর্তমানে পিবিআই খুলনাতে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, এনায়েত গাজী ও সইলুদ্দীনের ৩৫ শতক ভোগ দখলীয় জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে চায় আনোয়ারা বেগম। এটা নিয়ে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। তালা থানার সাবেক ওসি তদন্ত মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ আনোয়ারা বেগমের পক্ষ নিয়ে ২০১৭ সালের ৩ মে জমি দখল করার চেষ্টা করে। জোরপূর্বক জমি দখল চেষ্টার সেই ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তৎকালীন ওসি তদন্ত মাসুদকে তালা থানা থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে দেয়।
তিনি জানান, শনিবার (১২ জুন) বিকেল ৫টার দিকে সেই ওসি তদন্ত মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ আনোয়ারা বেগমের বাড়িতে আসে ও বিরোধপূর্ণ জমিতে যায়। তিনি আনোয়ারা বেগমকে বলে গেছেন, দখল করে নাও সমস্যা হলে আমি দেখবো। এরপর সকালে এই ঘটনা ঘটেছে।
শাহপুর গ্রামের এনায়েত গাজীর ছেলে সেলিম গাজী জানান, ওসি তদন্ত মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ হুমকি দিয়ে যায় তোদের জমি দখল করিয়ে দিবো। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই তালা থানায় ঘটনাটি জানায় ও লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করি। এরই মধ্যে সকালে ৪০-৫০ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী এসে জমির মধ্যে খুঁটি বসাতে থাকে ও ইট নিয়ে আসে। বাঁধা দিতে গেলে আমার ভাই শাহিন গাজীকে হাতে কোঁপ দেয়। আমাকে ও ফুফু ফরিদা বেগমকে মারপিট করেছে।
তালা থানার সাবেক ওসি তদন্ত বর্তমানে পিবিআই খুলনার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ জানান, আমি বর্তমানে পিবিআই খুলনাতে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শনিবার একটি হত্যা মামলার তদন্ত কাজে তালার উপর দিয়ে কয়রাতে গিয়েছিলাম। আগে তালা থানায় দায়িত্বপালন করেছি সেই হিসেবে অনেকেই পরিচিত রয়েছেন। ফিরে আসার সময় কারো কারো সঙ্গে দেখা হয়েছে। শাহপুর গ্রামের বিরোধপূর্ণ জমিতে যাওয়া ও দখলে উৎসাহিত করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, জমি দখলের হুমকি দিয়ে গেছেন মাসুদ নামের একজন এমন অভিযোগ নিয়ে রাতেই আমার কাছে এসেছিল। লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। তাছাড়া সকালে বিরোধপূর্ণ জমিতে মারামারি হচ্ছে এমন ঘটনা জেনেই পুলিশ পাঠানো হয়। বড় ধরণের কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। বিরোধপূর্ণ জমিতে নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সাবেক ওসি তদন্তের বিরোধপূর্ণ জমিতে যাওয়া ও জমি দখলে উৎসাহিত করার প্রশ্নে তিনি বলেন, এক জায়গায় চাকুরি করে তার ওখানে যাওয়ার দরকার কি ? কেন গেল সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।
ঘটনার বিষয়ে পিবিআই খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ যদি তালাতে গিয়ে থাকেন তবে সেটি ব্যক্তিগতভাবে নিজ দায়িত্বে গিয়েছেন। তাকে সেখানে কোন দায়িত্ব পালনে পাঠানো হয়নি। ঘটনাটি খোঁজ খবর নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, শাহপুর গ্রামের এই বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে আদালতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। মামলায় সাতক্ষীরা জজ আদালতের রায় এনায়েত গাজীর পক্ষে রয়েছে।