
ডেস্ক নিউজ: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর ইমারত নির্মাণ ও নকশা অনুমোদন কার্যক্রমে চলছে ভয়াবহ দূর্নীতি ও সিন্ডিকেট বাণিজ্য। বিশেষ করে রাজউকের জোন-৬/২ এ দায়িত্বে থাকা অথরাইজড অফিসার জান্নাতুল মাওয়া শুদ্ধাচারের মুখোশে গড়ে তুলেছেন একটি দুর্নীতিবাজ চক্র, যারা অনুমোদনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তদন্তে উঠে এসেছে, জোন-৬/২ এর বিভিন্ন মৌজা — ডেমরা, মাতুয়াইল ও আমুলিয়া এলাকায় ইমারত নির্মাণ অনুমোদন বা নকশা অনুমোদনের সময় ন্যূনতম গ্রাউন্ড কাভারেজ ও অন্যান্য শর্তের কথা বলে আবেদনকারীদের কাছ থেকে অবৈধ টাকা দাবি করা হয়। সরকারি ফি’র বাইরে গোপনে আদায় করা হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ, বিনিময়ে নকশা অনুমোদন করে দেওয়া হয় কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করেই।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, মাতুয়াইল মৌজার এম.এস দাগ নং ৩৪৫৩৫, ৩৪৫৩৬, ৩৪৫৩৯ ও ৩৪৫৪০ (অংশ) জমিতে নির্মিতব্য নয় তলা একটি ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জান্নাতুল মাওয়া সর্বনিম্ন গ্রাউন্ড কাভারেজ সুবিধা দেওয়ার শর্তে প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকার অবৈধ লেনদেন করেন।
বর্তমানে ভবনটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে তদন্তে দেখা গেছে, অনুমোদনের সময় নির্ধারিত কোনো শর্তই মানা হচ্ছে না।
ভবন মালিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, “সব কিছু অফিসে ম্যানেজ করেই কাজ করছি।”
এতে স্পষ্ট হয়, রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের নির্মাণ সম্ভব নয়।
রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী অথরাইজড অফিসারদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বদলি করার কথা থাকলেও জান্নাতুল মাওয়া দীর্ঘদিন ধরে একই জোনে (জোন-৬/২) দায়িত্ব পালন করছেন।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, গত দুই-তিন বছরে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তার বদলি হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের পদ ধরে রেখেছেন। এতে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, কোনো উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে কিনা।
অভিযোগ রয়েছে, জান্নাতুল মাওয়া নিজের দুর্নীতির চক্র আড়াল করতে নিয়মিত “শুদ্ধাচার” ও “নিয়মনীতি”র কথা বলে থাকেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ।
বিস্ময়ের বিষয়, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তাকে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছিল — যা অনেকের কাছে প্রহসনের সমান মনে হয়।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও দায়িত্ব পালনে শুদ্ধাচারের পরিবর্তে রাজউকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন।
৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তনের পরও এই সিন্ডিকেট বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, জান্নাতুল মাওয়া এখনো এক বা একাধিক দায়িত্বে থেকে ইমারত নির্মাণ অনুমোদন/নকশা অনুমোদনের নামে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজউকের বিভিন্ন প্রকৌশলী ও অনুমোদনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
“জোন-৬/২ অফিসে নির্ধারিত সরকারি ফি দিলেই কাজ হয় না। অতিরিক্ত টাকা না দিলে নকশা আটকে রাখা হয়।”
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউকের এই ধরনের সিন্ডিকেট বাণিজ্য শুধু প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে না, বরং রাজধানীর নিরাপদ ভবন নির্মাণ ও নগর পরিকল্পনাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে।
তারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
রাজউকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বারবার অভিযোগ উঠলেও কেন দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না — এ প্রশ্ন এখন সাধারণ নাগরিকদের।
রাজধানীর উন্নয়ন তদারককারী প্রতিষ্ঠান যদি নিজেই দুর্নীতির ঘেরাটোপে বন্দি হয়, তবে সাধারণ নাগরিক কোথায় যাবে?

