অপরাধ ঢাকতে এনআইডি কার্ডের নাম মফিজুল ইসলাম বাদ দিয়ে পলাশ মাহমুদ নামে জন্মসনদ তৈরী করেছে। ছাত্রজীবনে প্রতাপনগর আবু বক্কর সিনিয়র মাদ্রাসায় ক্লাস সেভেন পর্যন্ত, ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কয়রার কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত, ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ এবং সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখাকালে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির নেতৃত্বে ছিল মফিজুল ইসলাম।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনির দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার মফিজুল ইসলাম নাম পাল্টিয়ে ছদ্মনামে বেপরোয়া হয়েছে। কখনো ঠিকানা পাল্টিয়ে, কখনো পলাশ মাহমুদ নাম আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো জমি দখল, কখনো চাকরিতে নিয়োগের নামে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয়ে করছেন চাঁদাবাজি। একাধিক নাশকতা মামলার আসামী মফিজুল সরকার বিরোধী উচ্চ পর্যায়ের তান্ডবে অংশ নিয়েছেন। আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল তার। এসব ঘটনার তৎকালীন সময় বডি ওয়ারেন্ট এ থাকলেও কৌশলে রেহাই পেয়ে যান তিনি। এখনো দিব্যি সরকার বিরোধী প্রপাগান্ডায় লিপ্ত রয়েছেন বহাল তবিয়তে। জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার গোকুলনগরের মৃত মোহাম্মদ আলী গাজীর পুত্র মোঃ মফিজুল ইসলাম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় সনদ পত্রে তার নাম ‘মোঃ মফিজুল ইসলাম’ লিপিবদ্ধ আছে। যার নং- ১৯৮৮৪৭১৫৩৫৫৭৪৯৮১৩। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের নাম পাল্টে ‘পলাশ মাহমুদ’ নামে জন্ম সনদ তৈরি করে নিয়েছেন। যার নং-১৯৮৮৪৭১৫৩৫৫১০০৬৫৯। এভাবে নাম পরিবর্তন করে এবং জন্মস্থান গোকুলনগর ত্যাগ করে খুলনা জেলার ১ নং কয়রায় স্থায়ী ঘাটি গেড়েছেন। সাংবাদিক পরিচয়ে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকার বিরোধী অনেক তান্ডব ও সহিংসতায় সরাসরি অংশ নেওয়া স্বত্ত্বেও এখনও দাপটের সাথে ত্রাশের রাজত্ব পরিচালনা করছেন তিনি। তার এসব অপকর্মে সহযোগীতা করেন তার ভাই এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী ও বি.এন.পি নেতা শরিফুল ইসলাম, জামায়াত কর্মী রবিউল ইসলাম । তার পুরো পরিবার জামায়াত-বি.এন.পির রাজনীতির সাথে যুক্ত। শিবির ক্যাডার মফিজুল ইসলাম ওরফে পলাশ মাহমুদের জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, “ ২০০০ সালে সে কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ছাত্র শিবিরের কর্মী এবং সাথী প্রার্থী এবং সাথী হন। ২০০২ সালে কালনা মাদ্রাসা শাখা শিবিরের উপকমিটির সদস্য হন। ২০০৩ সালে কয়রা কপতাক্ষ কলেজ শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি হন এবং কয়রা থানা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনোনীত হন। ২০০৫ সালে উক্ত কলেজ থেকে এইচ এসসি পাশ করে ছাত্র শিবিরের সদস্য ক্যাডার হয়ে খুলনা মহানগর ছাত্র শিবিরে যোগদান করে। খুলনা মহানগর ছাত্র শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ভিসির সাথে তার বিবাদ সৃষ্টি হলে তার নেতৃত্বে শিবির ক্যাডাররা ভিসির বাসায় হামলা করে এবং ভিসির স্ত্রীকে মারপিট করে। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সেসময় সে বডি ওয়ারেন্টে ছিল। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়ে এবং আত্মগোপন করে নাম পরিবর্তন করে পলাশ মাহমুদ নাম ধারণ করে। তার বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরী আছে। সাতক্ষীরা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৪১৬/১৯ নং মামলা ছিল। শিবির ক্যাডার মফিজুল ওরফে পলাশ মাহমুদের হুকুমে ২০১৯ সালের ২০ মে তার ভাই বি.এন পি নেতা শরিফুল, জামায়াত নেতা রবিউল ও তাদের দলের সঙ্গীরা মিলে মৃত বকস গাজীর পুত্র আবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায় এবং আবুল হোসেনের ভাই শওকত, ভাইপো ইমদাদ, আবীর ও তার স্ত্রী হাড়ভাঙা জখম করে। শিবির ক্যাডার মফিজুল ওরফে পলাশ মাহমুদের ভাই শরিফুল ইসলাম একজন চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী। ২০০২ সাল থেকে অদ্যবদি সে প্রতাপনগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বহাল আছে। তার বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় অস্ত্র মামলা (০১/৯৫), খুলনা সদর থানায় চাঁদাবাজী ও অপহরণ মামলা (৬৮/৯৮), আশাশুনি থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা (১৭/১ ও ১৫/০৪ ও জি,আর ১০৭/১৯, ৪১৬/১৯) নং মামলা আছে। বিগত দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সাতক্ষীরা ও রাজধানী ঢাকায় সে তান্ডব চালায়। জমি দখল, মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা তার প্রধান পেশা। প্রতাপনগরের জনৈক ডিস ব্যবসায়ী আমিনুর এর সাথে সে শেয়ারে ডিশ ব্যবসা করতে যায়। এক পর্যায়ে সে ও তার পুত্র বিথার বাবু মিলে আমিনুরকে ব্যবসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমিনুর ব্যবসায়ে তার বিনিয়োগ ১,৭৫,০০০/- টাকা ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার দাবী করেও কোন প্রতিকার পান নি ডিস ব্যবসায়ী আমিনুর। শিবির ক্যাডার মফিজুল ওরফে পলাশ মাহমুদের অপর ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম প্রতাপনগর ইউনয়নের ৯ নং ওয়ার্ড জামায়াতের কর্মী। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে ৪১৬/১৯, ৫৯/১৯ ও ১০৭/১৯ এবং ১০৭/২৩ নং মামলা চলমান আছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় একাধিক অভিযোগ ও জি.ডি রয়েছে। সর্বশেষ গত চলতি বছরের ২২ এপ্রিল তারিখে জমি দখলের উদ্দেশ্যে মফিজুল ইসলাম ওরফে পলাশ মাহমুদের হুকুমে তার ভাই রবিউল শরিফুল, আছাদুল, ফয়জুল সহ দুর্বৃত্তরা মৃত: বকস গাজীর পুত্রদের দখলীয় জমিতে হানা দেয় । এসময় মৃত বকস গাজীর পুত্র আবুল হোসেন, শওকত হোসেন, শওকত এর পুত্র আবির হোসেন ও আবুল হোসেন এর স্ত্রী রুমিছা খাতুনকে হাড়ভাঙা জখম করে । এ ঘটনায় আবুল হোসেন বাদী হয়ে আমলী ৮ নং আদালতে ১৭৮/২৩ (আশা) মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে মফিজুল ইসলাম তার ভাই শরিফুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুনকে দিয়ে উল্টো হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের নামে আমলী ৮ নং আদালতে মামলা দায়ের করে। যার নং সি-আর ১৯৩/২৩। শিবির ক্যাডার মফিজুল ওরফে পলাশ মাহমুদের এমন বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার মানুষের। শিবির ক্যাডার সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মফিজুল ওরফে পলাশ মাহমুদের নাম পাল্টিয়ে ত্রাশের রাজত্ব পরিচালনা করায় ক্ষতিগ্রস্থ দক্ষিণ খুলনার অসংখ্য মানুষ। মফিজুলের হাত থেকে রেহাই পেতে আবুল হোসেন সহ এলাকার সচেতন মহল পুলিশ সুপার সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।