সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কথিক জিনের বাদশার ফাঁদে পড়ে ৬৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন এক গৃহবধু। গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ ফোন আসে উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামের ওই গৃহবধুর কাছে। ফোন ধরতেই ‘বাবা’ সম্বোধন করে জেগে ওঠার অনুরোধ করে। এরপর নানা কথায় ভয়ভীতি দেখিয়ে কাবু করে ফেলে গৃহবধুকে। কথা না মানলে ‘একমাত্র ছেলের নাকমুখ দিয়ে রক্ত ঝরবে’ বলে ভয় দেখায় কথিত জিনের বাদশা।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জিনের বাদশার কথা মতো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখতে পান স্বর্ণের মতো দেখতে পিতলের টুকরো। আর তা নিজের কাছে আগলে রেখে কথিত ‘জিনের বাদশা’র ফাঁদে পড়ে কাউকে না জানাতে কোরআন শপথও করেন। এই পিতলের টুকরো হয়ে যাবে ‘এক কেজি স্বর্ণ’ এমন কথা বলে কয়েক দফায় বিকাশে মোট ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কথিত ‘জিনের বাদশা’। চারদিন পরও পিতলের টুকরো স্বর্ণে রূপান্তরিত না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
স্থানীয় সূত্র ও প্রতারণার শিকার ওই নারী জানান, তিনি একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ। শুক্রবার শেষরাতে ০১৯০৪১৬৩৫৩৪ নম্বর থেকে ফোন আসে। বাবা বলে সম্বোধন করে বলতে থাকে, তিনি পাহাড়ের ওপর থেকে ফোন করেছেন। কুদরতিভাবে তিনি বেশ কয়েকটি স্বর্ণের টুকরা পেয়েছেন। যার একটার মালিক তুই। এ অবস্থায় ওই টুকরো পেতে হলে তার কিছু কথা শুনতে হবে। কিন্তু কথাগুলো কাউকে বলা যাবে না। বললে ভয়ানক ক্ষতি হবে। তা ছাড়া নিজের একমাত্র ছেলের নাকমুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মারা যাবে।
এ কথা বলার সময় জিনের বাদশা তার (গৃহবধূ) পরিবারের সকল কিছু এমনভাবে বলছে যা সত্যি। বাড়ির আঙিনায় কোথায় কি আছে সব বলছে। পরদিন সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে একটি জায়গায় যেতে বলে। সেখানে একটি পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতর রাখা পিতলের টুকরোটি নিয়ে সোজা ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে গভীর রাতে অজু করিয়ে কোরআন সামনে রেখে শপথও করায়। যেন এ সব কথা কাউকে না বলা হয়।
এ অবস্থায় বেশ কয়েকবার ফোন করে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং চার হাজার মক্কা-মদিনার মেহমানকে খাওয়ানোর কথা ও তাদের নজরানা দেয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা পাঠাতে বলে। আর এই টাকা পাওয়া মাত্রই পিতলের টুকরোটি হয়ে যাবে এক কেজি পরিমাপের সোনা।
এ বিশ্বাসে ওই গৃহবধূ জিনের বাদশার দেওয়া বিকাশ নম্বর ০১৯০২৬১৪৮২৬ ও নগদ নম্বর ০১৯০৮০১২৭২৩ তে বেশ কয়েক দফায় ৬৫ হাজার টাকা পাঠায়। পরে ওই নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। পরে আরেক নম্বরে ফোন করে বলা হয় কমপক্ষে চার দিন অপেক্ষা করতে হবে এর মধ্যে অলৌকিকভাবে পিতলের টুকরোটি সোনা হয়ে যাবে। কিন্তু ১০ দিনেও টুকরোটির কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় গৃহবধু বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ অবস্থায় তিনি তার স্বামীকে নিয়ে সোমবার (৪ জানুয়ারী) রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কাদির মিয়া জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ওই গৃহবধু পরিচিত কারো দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের প্রতারণা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তিনি।