মো: কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: কালুরঘাট সেতুর ইজারাদারের কাছে রেল জিম্মি, বাকি রয়েছে আড়াই কোটি টাকা। ঝুকিপূর্ন সেতু দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের পারাপারের সুযোগ দিচ্ছে ইজারাদার। ৭ টনের অধিক মালামাল বোঝাইকৃত যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০-২২ টনের গাড়ি চলার সুযোগ দিচ্ছে মোটা অংকের টুলের মাধ্যমে। যে কোন মুহুর্তে সেতুতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদার। ইজারাদারের বিগত ৫ বছরে সেন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ব্রিজ ইজারা নিয়ে কৌশলে রেলের রাজাস্ব্য আত্মসাত করেছে অন্তপক্ষে ত্রিশ কোটি টাকা। অন্যদিকে আড়াই কোটি টাকা বাকি রেখে লোকশান দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা যায়।
ঘটনার বিবরণ: করোনাকালীন লোকসান কমাতে ৬৭দিন সেতুর মেয়াদ বাড়াতে চান ইজারাদার। কিন্তু ইজারা পাওয়া অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করছেন। আর এ অর্থ না পেয়ে রেল কর্তৃপক্ষ মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে কোনো মতামত দিচ্ছে না। যদিও করোনার কারণে সাধারণ ছুটির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইজারার মেয়াদ নির্ধারণপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলে জি.এম (পূর্ব) কে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিও করা হয়েছে। গত ৯ আগস্ট করা এ কমিটি এক মাসেও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। আর ‘আবদার’ অপূর্ণ থাকায় রেলের পাওনা দুই কোটি ৪৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি কালুরঘাট সেতুর ইজারাদার।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ইজারাদারের কাছে আড়াই কোটি টাকা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পাওনা থাকলেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। জানা যায়, বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমল থেকে সুবিধাভোগী আওয়ামীপন্থী কথিত নেতাদের পাটনার করে জামাত-বিএনপির জঙ্গির অর্থযোগানদাতারা রেলওয়ে টিকাদারী-ইজারা নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিবারই তাদের নিয়ন্ত্রন থাকে কালুরঘাট সেতুর ইজারা।
চলতি বছরে ২ ফেব্রুয়ারী এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ওজন মাপার স্ক্রেনার বসানোর শর্তে “এএন এন্টারপ্রাইজকে” কালুরঘাট সেতুর ইজারা মূল্য তিন কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৮৬ টাকায় নির্ধারণ করে দিলেও রেল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখনো স্ক্রেনার মেশিন বসানো হয়নি।
এলাকাবাসীর দাবী ভারী যানবাহন চলাচলে ফলে কালুরঘাট সেতুটি প্রতিনিয়ত বিকল হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার সিন্ডিকেটের “এবি কন্ট্রাকশন” নামে অপর একটি প্রতিষ্টান সেতু সংস্কারের নামে ৫২লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেতু সংস্কারের নামে ৫২লক্ষ টাকা বিষয়ে তদন্তের জন্য রেলকর্তৃপক্ষ ও দুদক বরাবরে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের এক আইনজীবি।
জানা যায় বর্তমানে সেতু ইজারাদার সিন্ডিকেটের সদস্যরা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তা মো: মতিন ও প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কংকন চাকমার পরামর্শক্রমে করোনাকালীন লোকসান কমাতে ৬৭দিন সেতুর ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ডিজি ও জিএম বরাবরে আবেদন করে রেলওয়ের আরো সোয়া কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নেওয়া পরিকল্পনায় চালাচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কংকন চাকমা বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর ইজারাদারের সাথে আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি সেতুটি পাওয়ার পর আমরা টোল আদায়ের অনুমতি দিয়েছি। সে করোনাকালীন সময়ে ৬৭দিন মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি এখনো আমাদের কিছুই জানায়নি। এরমধ্যে ইজারাদার আবার ডিজি অফিসে আবেদন করেছেন। যে বিষয়ে আমাদেরকেও অবহিত করেছেন। কিন্তু ডিজি অফিস আমাদের কাছ থেকে কিছুই জানতে চায়নি। ইজারাদার কালুরঘাট সেতুর টোল আদায়ের কিছু টাকা পরিশোধ করলেও বাকি টাকা এখনো দেয়নি। এ টাকা দিতে আমরা ইজারাদারকে চিঠিও দিয়েছি।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতুর ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চেয়ে মহাপরিচালকের নির্দেশনা চায় রেলওয়ে। পরে গত ৯ আগস্ট প্রেরিতে এক পত্রে ইজারার সমুদয় মূল্য পরিশোধের জন্য পুনরায় পত্র প্রদান এবং সাত দিনের মধ্যে ইজারার সমুদয় অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে জমাকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন রেলওয়ে ডিজি। একইদিনে প্রেরিত অপর একটি চিঠিতে করোনার কারনে সাধারণ ছুটির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইজারার মেয়াদ নির্ধারন পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে আহবায়ক এবং প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলীকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এ কমিটি ইজারার মেয়াদ নির্ধারণ করেনি এখনো। যে কারণে রেলওয়ে ডিজির নির্দেশে গত ২৭ আগস্ট পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি দপ্তর থেকে প্রেরিত এক চিঠিতে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান এএন এন্টারপ্রাইজকে পাওনা দুই কোটি ৪৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৬ টাকা প্রদানে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। সেতুর ইজারা মূল্য তিন কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৮৬ টাকা। এরমধ্যে এক কোটি এক লক্ষ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করেছিল ইজারাদার।
এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহদাত আলীকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। কালুরঘাট সেতুর ইজারার মেয়াদ বিবেচনায় গঠিত কমিটির সদস্য ও রেলওয়ের প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম সকালের সময়কে বলেন, ‘একটা কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির কার্যক্রম যতটুকু জানি শুরু হয়নি। বিষয়টি জিএম স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
কালুরঘাট সেতুর ইজারাদার মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমি করোনাকালীন সময়ে লোকসানের কবলে পড়েছি। যে কারণে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি। সেতু ইজারার কিছু টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা দিতেও কিছুদিন সময় চেয়েছি। রেলের পাওনা অবশ্যই দেয়া হবে।’