মো: রাকিব, চট্টগ্রাম থেকে:
করোনার এই সংকট কালে চট্টগ্রামে বেড়ে চলেছে অবৈধ দখলদার ও প্রভাবশালী পাহাড়ী ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ত¡। এই অবৈধ দখলদার ও পাহাড়ী ভূমিদস্যুদেরা বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিঙ্ক রোডের দুই ধারে অবৈধভাবে পাহাড় কাটাসহ ঘর বাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কর্মব্যস্ততার সুযোগে জঙ্গল সলিমপুর, জালালাবাদ ও উত্তর পাহাড়তলী মৌজায় গড়ে ওঠেছে চার শতাধিক ঘর। কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক স্থানে পাহাড় ও ঢিলা কেটে ন্যাড়া করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কাঁচা-পাকা প্রায় চার শতাধিক ঘর তোলা হয়েছে। পাহাড়ে খাঁজে খাঁজে ও পাদদেশে এসব বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়। মো: মনিরুজ্জামান, মুহাম্মদ আবুল মনসুর ও বেলাল উদ্দিন নামে কয়েকজন ঠিকাদার প্রভাবশালীদের পক্ষে পাহাড় কেটে এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ কাজে জড়িত। রাতের গভীরে গোপনে এই পাহাড় কাটার কাজ চালায় মনির ও তাদের সন্ত্রাসী গ্রæপ। তারা প্রভাব খাটিয়ে মুখবন্ধ করে রেখেছে স্থানীয়দের।
স্থানীয় একজন ভুক্তভুগি বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল মালেক জানান, লকডাউন চলাকালীন সময়ে রাতের গভীরে আমার ওয়ারিশানক্রমে স্বত্বাধিকারী জঙ্গল ছলিমপুরস্থ মৌজাস্থ ভূমি গোপনে মনির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী জায়গা দখল ও পাহাড় কেটে জায়গা প্রসার করার চেষ্টা চালায়। এমনকি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমার জায়গা দখল করে। আমার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ইয়াছিন ব্যাপারী এবং আমার সহিত বায়নাকৃত মো: আনিছুর রহমান, মো: আরিয়ান রহমান ও মো: ফজলুল রহমান জাহাঙ্গীরসহ আরও ৩/৪টি পরিবার সকলে উক্ত জায়গায় বসবাসরত আছি। এই ঘটনার জের ধরে আমরা জায়গা দখল করতে না দেওয়ায় আমার সহিত বায়নাকৃত মো: ফজলুল রহমান জাহাঙ্গীর কে ২৩ শে মে দিনে দুপুরে মনির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী গুরুত্বরভাবে আহত করে এবং এলাকা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দেয়। তিনি এখন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছে। এই বিষয়ে থানা প্রশাসনকে জানানো হলেও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি মর্মে জনান তিনি।
তিনি আরও জানান, অত্র এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ভূমি দস্যু ও বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের সহিত জড়িত ঘটনাসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকা এবং এলাকায় দোশরদের নিয়ে দখলবাজী করে এলাকায় তাদের অত্যাচার জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। উক্ত দখলবাজরা শালিশবিচারের তোয়াক্কা করে না। তাদের নেতৃত্বে শতাধিক শ্রমিক দুই মাস ধরে পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে। প্রশাসনের কর্মব্যস্ততার সুযোগে নির্বিঘেœ চলছে পাহাড় কাটার উৎসব। পাহাড় কাটা পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই জড়িত। কয়েকজন পুলিশ সদস্য নামে-বেনামে ঘর নির্মাণ করেছেন। পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণে পুলিশ জড়িত থাকায় পাহাড়খেকোরা অতি উৎসাহিত হয়ে যত্রতত্র পাহাড় কাটায় অনেকটা নিরাপদ মনে করছে।
ইয়াছিন ব্যাপারির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৪ শে জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশ ইউ এন ও সীতাকুন্ড এক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। তার প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ শতাধিক অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই অবৈধ ঘরের মালিক ছিলেন, মুহাম্মদ আবুল মনসুর ও বেলাল উদ্দিন। উচ্ছেদের পর ইয়াছিন ব্যাপারিকে মুহাম্মদ আবুল মনসুর ও বেলাল উদ্দিন বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেয় এবং এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় বলে তিনি জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো পরিচালক মো. নুরুল্লাহ ন‚রী বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে আগামী রবিবার সভা আহŸান করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ঝুঁকিপ‚র্ণ ১৮টি পাহাড় ছাড়াও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিঙ্ক রোড এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অবৈধ পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, করোনা সংকটের সুযোগে যত্রতত্র পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব শক্ত হাতে দমন করতে হবে। সরকারি পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।
চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে বাড়িঘর তোলার রমরমা ব্যবসা
পূর্ববর্তী পোস্ট