কক্সবাজার প্রতিবেদক: প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার সন্ধ্যায়ও ঢুকে পড়েছে একটি বন্যহাতির পাল কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেতরে। এ বন্য হাতির দলে রয়েছে শাবকসহ ২৩টি বন্যহাতি। ১০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ঢুকে পড়লে ক্যামরা বন্দি করে পার্কের ওয়াল্ড লাইফ রাজিব কুমরার দে।
বন উজাড় হওয়ার কারণে খাদ্য ও নিরাপদ আসাবস্থলের জন্য পার্কের দেয়াল ভেঙ্গে পথ সৃষ্টি করে। ক্ষুধার্ত এসব হাতি দুই দলে ভাগ হয়ে পার্কের অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নকল্পে সৃজিত ১০০ হেক্টর বাগান তথা চারণভূমিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে পার্কের ওই বাগানটিই এখন বন্যহাতির খাবারের এবং চারণভূমির উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। গহীণ জঙ্গল থেকে প্রতিনিয়ত সন্ধ্যা হলে পার্কের ওই বাগানে এসে রাতভর খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফুটলেই ফের চলে যাচ্ছে। এভাবে গত একসপ্তাহ ধরে হাতিগুলো পার্কের ভেতর আসা-যাওয়া করছে। বাগানে বন্যহাতি ঢুকে পড়ার খবরে পার্ক কর্তৃপক্ষ রেড অ্যালার্ট জারি করে সেখানে পার্কের কর্মীদের সতর্ক পাহারায় রেখেছেন। যাতে পার্কে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা ঢুকে পড়া বন্যহাতির অবস্থানের কাছে যেতে না পারে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব হাতি পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়নে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১০০ হেক্টর এলাকায় সৃজিত পশুখাদ্য বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করে। নষ্ট করে দেয় উড়ি আমের ৮ হাজার ৫শ চারা। তখন হাতিগুলো সেখানে প্রায় ৫দিন অবস্থান করেছিল। এর পর ১০টি ও ১৩টি করে দুইদলে ভাগ হয়ে বন্য হাতিগুলো চলে যায় পাহাড়ের দিকে। সেখান থেকে শাবকসহ ১৩টি হাতি রয়েছে।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গতকাল ১০ জানুয়ারী থেকে ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কয়েক দফায় বন্য হাতিগুলো পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ওইসময় তারা পশুখাদ্যের বাগানে তাণ্ডবও চালায় এবং বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে। তিনি জানান, একইভাবে হাতির দলটি গত একসপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই পার্কের অভ্যন্তরের পশুখাদ্যের বাগানে ঢুকে পড়ছে। আবার ভোরের আলো ফোটার আগেই গহীন জঙ্গলের নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। পার্ক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম আরো বলেন, ‘এভাবে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করায় পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকর্তাবস্থায় রাখা হয়েছে। যেসব এলাকায় বন্যহাতি অবস্থান করছে সেখানে কিছুদূর পর পর পার্কের কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছে। যাতে পার্কে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা ভুল করে ওইদিকে যেতে না পারে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের সংরক্ষিত বন উজাড় হওয়ার কারণে বন্যহাতির খাবারের উপযুক্ত স্থান এবং আবাসস্থল অনেকটা ধ্বংস হয়ে পড়েছে। এতে খাবারের সন্ধানে বেপরোয়া হয়ে উঠে ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পাল। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসলে গত ১০ বছরের বেশিসময় ধরে চলছে মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব।