
নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক রোগীর মৃত্যু, যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে আশাশুনি উপজেলার কুল্যার মোড়ের মা সার্জিক্যাল ক্লিনিক। আলোচিত এ ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করলে কিছুটা সজাগ হয় তারা। পরে বিভিন্ন যোগাযোগে অভিযোগের বিষয় বস্তু ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারী প্যাথলজিষ্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাফার, এমবিবিএস চিকিৎসক, ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন করা না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মি আক্তার মা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের পরিচালক তরুণ কুমার মন্ডলের এক মাসের বিনাশ্রম কারাদÐ প্রদান করেন। সাজার মেয়াদ শেষ হতেই জেল থেকে বেরিয়ে কোন কিছু নবায়ন না করেই তরুণ কুমার মন্ডল আবারও শুরু করেন ক্লিনিকে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে আশাশুনি উপজেলার কুল্যার মোড়ে ভুল অপারেশনের কারণে এক প্রসূতি মায়ের প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। নিহতের স্বজনদের রোসানলে পড়ে অপরাধ ঢাকতে শেষ পর্যন্ত বড় অংকের টাকা গচ্চা দিয়ে তাৎক্ষণিক রেহাই পান ক্লিনিক মালিক তরুন কুমার মন্ডল।
নিহত মা কুল্যা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের সেলিম সরদারেরর স্ত্রী তহমিনা খাতুন। ঘটনার সময় তার প্রসব বেদনা শুরু হলে মা-সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্ভয়ে তার ক্লিনিকে রোগীকে ভর্তি করতে বলেন।
শুক্রবার রাত্র ৮ টার দিকে প্রসূতি মাকে ক্লিনিকে আনা হলে ক্লিনিক মালিক তরুন রোগি দেখার পর প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সিজার করার কথা বলেন। রোগির স্বজনরা ডাক্তারের কথায় আশ্বস্থ হতে না পেরে সাতক্ষীরায় নেওয়ার উদ্যোগ নেন কারন রোগির দু’পা ফোলা ছিল, শারীরিক দুর্বলতা ও রোগি ভয়ে কাপছিল। কিন্তু ক্লিনিক মালিক তরুন এতকিছুর পরও “সব দায়িত্ব আমার, আমি অপারেশন করাব” এমন বাক্য ছুড়ে রাত্র ১০ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তড়িঘড়ি করে প্রসূতির স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে অপারেশন শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে যে, অভিজ্ঞ এ্যানাস্তেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই নিজেরাই রোগি অজ্ঞান করানোর কাজ করেন এবং ভুল অপারেশনের কারনে রোগির বিøডিং বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তখন বাধ্য হয়ে তিনি এম্বুলেন্সযোগে রোগিকে সাতক্ষীরার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নেওয়া হলে তারা রোগি ভর্তি নেয়নি। তখন রোগিকে সিবি হসপিটালে নেওয়া হলে রোগিকে মৃত্যুঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর খবর জানার পর উত্তেজিত স্বজনরা তরুন মন্ডলকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে রক্ষার জন্য সেখান থেকে একটি প্রাইভেটে করে দ্রæত গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়। মাতৃহীন সদ্য ভুমিষ্ঠ শিশুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ক্লিনিক মালিককে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে। পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামের ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে ক্লিনিক মালিক তরুণ কুমার মন্ডল প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ক্লিনিকটি চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে অভিজ্ঞতা ছাড়া নার্সের নামে সুন্দরী মেয়ে রেখে ক্লিনিকে রমরমা দেহ ব্যবসা চালান বলে তরুন কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ক্লিনিক পরিচালক তরুন কুমার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কেন? দেশের শতভাগ ক্লিনিকে লাইসেন্স নেই। আমি তো প্রশাসনের সব কিছু ম্যানেজ করে ক্লিনিক পরিচালনা করে যাচ্ছি বলে তিনি দাবী করেন।