
হাফিজুর রহমান কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : প্রতিবেশির সম্মতিতে ডোবায় পানি ফেলানো কে কেন্দ্র করে ভ্রাম্যমান আদালতে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ দিয়ে হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনায় কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অবসর প্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা শেখ নুরুল ইসলাম গত বুধবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর এক অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা এবং উপজেলা জুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করায় বুধবার বিকালে বিষয়টি জেলা প্রশাসক এস,এম মোস্তফা কামাল তদন্ত করার আশ্বাস দেওয়ায় কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন কে অপসারন না করা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর কর্মসূচী দেওয়ার হুশিয়ারী উচ্চারন করেছে। অভিযোগের সূত্র এবং সরে জমিনে গেলে আব্দুল হান্নান, বাবু, কামাল হোসেন, রেহেনা পারভীন সহ একাধিক ব্যক্তি জানান কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের শীতলপুর গ্রামের এবং কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পিয়ন মরিয়ম খাতুন তার পাশে বসবাস কারী জনৈক পুলিশ সদস্য আজিম উদ্দীনের নামে গত ১ সেপ্টেম্বর তার জমিতে পানি ফেলানোর অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারর দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার সময় কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সরদার মোস্তফা শাহিন পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে বাড়ির মালিক পুলিশ সদস্য আজিম উদ্দীন কে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদন্ডের ঘোষনা দেন। পুলিশ সদস্য চাকুরীতে বাইরে থাকায় তার বাসার ভাড়াটিয়ারা জরিমানার ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করলে রেহাই দেওয়া হয়। অভিযোগকারী মরিয়ম খাতুনের বাড়ির পাশে ৫শতক জমি কিনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিব নগর সরকারের প্রথম সালাম প্রদানকারী অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা শেখ নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। বাড়ির পাশে অনুমতি নিয়েই মরিয়মের ছোট ডোবায় বাড়ির পানি সরানোর ব্যবস্থা করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে মরিয়মের কোন অভিযোগ না থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম কে ডেকে পাঠায়। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আসলে পানি ফেলার বিষয়ে ইউএনওর নিকট ভুল স্বীকার করে বলেন স্যার তার অনুমতিতেই আমি পানি ফেলেছি । আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমার গেজেট নং-১৮৮, মুক্তিবার্তা নং-০৪০৪০৭০৩৪৭, ভারতীয় তালিকা নং-৪৫৬৭৪, তাহা ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছে। আমি মুজিবনগর সরকারের প্রথম গার্ড অব অনার প্রদানকারীর একজন সদস্য। এ কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন তাকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইন ১৯৯৫ সালে ১৫এর গ ও চ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১মাসের কারাদন্ডের ঘোষনা দেন। এই সময় তার কাছে ৫ হাজার টাকা না থাকায় সময়ের প্রার্থনা করিলে সঙ্গে থাকা থানার এ এস আই সাইদুর রহমান কে দিয়ে জোর পূর্বক হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে গাড়িতে তোলেন। অবস্থা দেখে স্থানীয় নারী পুরুষরা একত্রিত হয়ে ইউএনও’র আচারণের প্রতিবাদ জানান। ঐ সময় শীতলপুর গ্রামের জনৈক এক মহিলা মুক্তিযোদ্ধার অসম্মান না সইতে পেরে তার বাড়ি হইতে ৫ হাজার টাকা এনে দিলে টাকা ছাড়া রশিদ কেটে তাকে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা জুড়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় মুক্তিযোদ্ধা ভবনে কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যরা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্যরা এক জরুরী সভায় মিলিত হয়। উক্ত সভায় বক্তারা বলেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করলেও তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না সেটা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। জেলা প্রশাসক মহোদয় তদন্ত করে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে অপসারণ না করলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করতে বাধ্য করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন কালিগঞ্জে যোগদান করার পর হইতে একের পর এক বিতর্ক জন্ম দিয়ে চলেছেন। গত কিছুদিন আগে কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের রোকন চৌমুহনী ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালী কে বাচানোর জন্য কালিগঞ্জের এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে হত্যা, নাশকতা, জালাও পোড়াও ১৪টি মামলা থাকলেও তিনি সব মিথ্যা বলে জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ হেলালীর পক্ষে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপ্রসংগে গতকাল বুধবার বেলা ২টা ৯ মিনিটের সময় উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তার মুঠো ফোনে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সাতনদীকে বলেন আমি কোন মুক্তিযোদ্ধাকে জরিমানা বা শাস্তি দেয়নি। আমি একজন অপরাধীকে জরিমানা করেছি এবং হাতে হাত কড়া পরিয়েছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না একজন ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে আদালত পরিচালনা করেছি। সেখানে কে মুক্তিযোদ্ধা কে মুক্তিযোদ্ধা না সেটা দেখার বিষয় আমার না। আমার দৃষ্টিতে একজন অপরাধী অপাধীই, একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে যেয়ে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করে তখন কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় ছিল। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মাথায় টুপি দিয়ে থাকে, সে বি,এন,পি করত, একথা ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে আরও অনেক কথা বলেন।