
হাফিজুর রহমান: সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমন। উপজেলায় যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে তাতে উদ্বিঘœ সচেতন মহল। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সৃষ্টি হয়নি সচেতনতা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনা অনেকেই মানছে না। অনেকে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম। শহর গ্রাম ও বিভিন্ন বাজার সহ চায়ের দোকানেএকই চিত্র।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার দোকান গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কেনাকাটার জন্য। মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার জন্য হাট-বাজার গুলোতে এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক থেকে বের হওয়ার নির্র্দেশনা থাকলেও তা কোথাও মানা হচ্ছে না। ব্যাংক গুলোতে একই অবস্থা। বাইরে ঠাসাঠাসি লম্বা লাইন। যে কারণে ইদানিং ব্যাংক কর্মকর্তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কালিগঞ্জ ইসলামী ব্যাংকের ১৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহের পর গতকাল ৩ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। উপজেলার গ্রাম, বাজারে বিভিন্ন হোটেল ও চায়ের দোকানে মানুষ সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে আড্ডা দিচ্ছেন। নাগরিক সচেতনতা তৈরী না হলে সংক্রমনের সংখ্যা আরও দিন দিন বাড়তে পারে বলে আশংখ্যা করছেন অনেকেই। সংক্রমন ঠেকাতে ঘরে আবদ্ধ সময় বাড়ানো এবং প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।
এদিকে সর্বশেষ পাওয়া খবরে আজ কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিদর্শক, অফিস সহকারী, ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা সহ নতুন করে ২০ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে।
নতুন করে শনাক্ত হওয়া ব্যডক্তরা হলেন কালিগঞ্জ উপজেলার মহৎপুর গ্রামের শেখ আব্দুর রশিদের পুত্র উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নাজমুল ইসলাম(৪০), উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক কে এম মঞ্জুর কাদের (৫৭), অফিস সহকারী আব্দুল্লাহ পাড়ের পুত্র মাহবুবুর রহমান (৪০), কালিগঞ্জ ইসলামী ব্যাংকের ৩ জন কর্মকর্তা যথাক্রমে সমশের আলী (৫০), শরিফুল ইসলাম (৪৮), শহিদুর রহমানের পুত্র খলিলুর রহমান (৪৮), মথুরেশপুর ইউনিয়নের শীতলপুর গ্রামের স্কয়ার কোম্পানীর মেডিকেল রিপ্রেজেনটিভ শামীউল ইসলাম (৩৫), একই গ্রামের আবু হোসেনের পুত্র আকবার হোসেন (৪৫) এবং তার পুত্র রাফি (২৮), নলতা ইউনিয়নের নলতা গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী ডাঃ তাহমিনা পারভীন (৩৪), তার পুত্র তাশওয়াপ (১২) ও তাহিয়ান (১), একই ইউনিয়নের গোবিন্দ সরকারের পুত্র হারান সরকার (৩৯), প্রফুল্ল স্বর্ণকারের পুত্র প্রসাদ স্বর্ণকার (৬৫), আবুল কাশেমের কন্যা রুহিনা তাসনীম (৫০), আনোয়ার হোসেনের পুত্র রিয়াজুল ইসলাম (৩৭), কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রামের শেখ আতাহারের পুত্র আব্দুল কাদের (৫৮), একই বাড়ির সদ্য মৃত শেখ মাওলা বক্স এর স্ত্রী মোছাঃ রহিমা খাতুন (৩৮) ও তার পুত্র মহিম হোসেন (১৫), একই গ্রামের নেছার উদ্দীনের পুত্র আবুল কাশেম (৪৮)।
গত ১০ জুলাই কালিগঞ্জ হাসপাতাল থেকে মোট ২৯ জন এর নমুনা সংগ্রহ করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। তার মধ্য থেকে রবিবার (১২ জুলাই) মোট ২০ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট ধরা পড়ায় বিষয়টি কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়বুর রহমানকে অবগত করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেলের নির্দেশে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেনের নেতৃত্বে স্ব স্ব ইউনিয়নের করোনা এক্সপার্ট টিমের সদস্যরা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করেন।
উপজেলায় নতুন করে ২০ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হওয়ায় এনিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ জনে দাড়ালো।