
ইমরান হোসেন, তালা থেকে: পরিবর্তন হয়েছে সবকিছুর তবুও সমাজের পিছিয়ে থাকা কিছু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি আজও। মাঝি কানু মিয়া তাদের-ই একজন। তিনি মানুষকে নদী পারাপার করে নিজের সংসার পরিচালনা করেন।
সবকিছুর পরিবর্তনের ভীড়ে শুধু অপরিবর্তন থেকে গেছে মাঝি কানু মিয়া জীবন। ৪০ বছর যাবত মাঝি পেশায় থেকেও জীবনের কোন বড় পরিবর্তন হয়নি তার। যাত্রীদের নদীর এপার থেকে ওপার নিয়ে যেয়ে দুই টাকা পারিশ্রমিক পান তিনি। পৃথিবীর সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পায়নি কানু মিয়ার পারিশ্রমিক।
কখনো প্রখর রোদ্রের মধ্যে আবার কখনো ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একজন যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকেন তিনি। আবার কখনো গভীর রাতে কেউ বিপদে পড়লে পারাপারের জন্য কানু মিয়াকে ডাকলেই ছুটে চলে আসেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে কানু মিয়া এক পরিচিত মুখ।
মাঝি কানু মিয়ার সাথে দেখা মেলে সাতক্ষীরা জেলার তালা বাজার কপোতাক্ষ নদের পারাপার খেয়া ঘাটে। কানু মিয়া সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার চর গ্রামের সরকারি জায়গায় বসবাস করেন। তিন মেয়ে সহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। তার সামান্য আয়ে সংসার চালাতে রিতিমত হিমশিম খেতে তাকে। তবুও মায়ায় পড়ে বাপ দাদাদের রেখে যাওয়া এই পেশা বদলাতে পারিনি তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, তালায় ব্রিজ হওয়ার আগে এই খেয়াঘাটি ছিল মানুষের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। সময়ে শত শত মানুষ এই খেয়াঘাট দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতো। ব্রিজ হওয়ার পরে এখানকার সংশ্লিষ্ট মাঝিদের জীবনে চলে আসে হতাশা দুর্দশা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ নৌকা দিয়ে নদী পার হয় না। নদীর ওপারে একটি সামাজিক বনায়ন থাকায় কিছু লোকজন কানু মিয়ার নৌকায় সেখানে ঘুরতে যায়। তাছাড়া নদীর ওপারে অল্প কিছু সংখ্যক জনবসতি থাকায় তারা নিয়মিত যাতায়াত করে। সবমিলিয়ে দিনে ৫০ থেকে ৬০ জনের মত যাত্রী পারাপার হয় কানুনিয়া নৌকাতে। তাতে তার আয় হয় ১৫০-২০০ টাকা। সামান্য টাকায় জীবন জীবিকা বেশ কষ্টসাধ্য।
মাঝি কানু মিয়া জানান, ৪০ বছর ধরে এই মাঝি পেশায় রয়েছি। বাপ দাদাদের এই পেশা ছাড়তে পারিনি কখনো। অন্য পেশাতে গেলে তেমন কাজও করতে পারি না। প্রতিটা যাত্রী পারাপার করে জন প্রতি দুই টাকা পায় তাই দিয়ে কোন রকমে সংসার চালায়। খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। মোটা কাপড় ও মোটা চালের ভাত খেয়ে জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীর সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু আমার পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায়নি। পারাপারের মূল্য যদি বৃদ্ধি করি তাহলে মানুষ আর আমার নৌকাতে উডঠতে চায় না। তখন বিকল্প পথে যাতায়াত করে। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের জন্য পারাপার পারিশ্রমিক দুই টাকায় রেখেছি, অন্যরা ৫ টাকা করে দেয় কেউকেউ । দশ বছর আগেও মানুষের কাছ থেকে দুই টাকা নিতাম এখনো দুই টাকা নেই।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, খেয়াঘাট ইজারার সময়ে মাঝিরা প্রথম সারিতে আবেদন করতে পারে এটা তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে তাদেরও মূল্যবৃদ্ধি করা দরকার। তাদের নতুন প্রজন্ম যারা তাদেরকে সরকারি সাপোর্ট দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে তবে সেটা যদি তারা আমাদেরকে জানায়।