** এজিএম তায়জুল ইসলাম রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় **
** তদন্তকারী দলের সম্মুখেই অভিযোগকারীকে হত্যার চেষ্টা **
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবৈধভাবে স্থাপিত বিদ্যুৎ চালিত অন্তত ৫টি মোটর থেকে বরো আবাদে সেচ দেওয়ার অভিযোগ দ্বিতীয় দফায় তদন্ত হয়েছে। একজন ডিজিএম এর নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত দলটি পাটকেল ঘাটা থেকে এসে গতকাল ঘটনা স্থল কুল্যা ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে তদন্ত সম্পন্ন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় দাদপুর গ্রামের এলটি-বি সেচ এর আওতাধীন বরো আবাদে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাঁচটি বিদ্যুৎ চালিত মোটর স্থাপন করে বরো আবাদে সেচ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি বুধহাটা সাব জোনাল অফিসের মৌখিক অভিযোগ দেওয়ার পরেও কর্তৃপক্ষ তালবাহানা শুরু করে। অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের পক্ষ নেয় খোদ এজিএম তায়জুল ইসলাম। পরবর্তীতে বিষয়টি পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জি,এম কে অবহিত করলে তিনি অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য বুধহাটা সাব জোনাল অফিসের তায়জুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে গত ৮ই জানুয়ারি সকাল দশটার সময় এজিএম তায়জুল ইসলাম তার অফিসের চার/পাঁচ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে ঘটনাস্থল দাদপুর গ্রামে অজিয়ার সরদারের মাঠের জমিতে জান।
সেখানে স্থাপিত বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ মোটর থেকে বরো আবাদে সেচ দেওয়ার তথ্যচিত্র সংগ্রহ করেন। এই অবৈধ মোটরটি ওজিয়ার সরদারের পুত্র রাসেল চালায়। রাসেল নিজেকে পল্লী বিদ্যুৎ এর পাবলিক কর্মীও পরিচয় দেয়। স্থানীয়ভাবে সে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিদ্যুৎ এর কাজ কর্ম করে থাকে। একারণে জোনাল অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। এই সুযোগ নিয়ে সে পৈত্রিক জমিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চালিত মোটর স্থাপন করে এই মোটর থেকে রাসেল ফজর সরদারের ছেলে নজরুল ও খানজালার দুই বিঘা জমিতে, পার্শ্ববর্তী দলিল সরদারের পুত্রদের দেড় বিঘা জমিতে, এবাদুল্যাহ সরদারের পঁচিশ কাঠা জমিতে, সোহরাব আলী সরদারের ওয়ারেশদের পনের কাঠা জমিতে এবং তার পিতার আড়াই বিঘা জমিতে ও আজিজুলের পাঁচ কাঠা জমিতে পানি দেয়।
পাশাপাশি এই রাসেল তার আপন ফুফা ছাফেত সরদারের বাড়ীতেও একটি বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ মোটর স্থাপনে সহযোগিতা করে। ছাফেত এই মোটর থেকে আজিজুলের দশ কাঠা, হান্নানের দশ কাঠা, খায়রুলের পাঁচ কাঠা এবং ছাফেতের নিজের পনের কাঠা বরো আবাদে এবং পনের কাঠা সবজি ক্ষেতে পানি দেয়। এছাড়াও ঐ অঞ্চলে আরও এধরনের বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ মোটর থেকে বরো আবাদে সেচ দেওয়া হয়। অপরদিকে একই ধরনের অবৈধ মোটর থেকে ইলিয়াসের চার বিঘা জমিতে পানি দেওয়া হয়। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ এর এই হরির লুট বন্ধে কর্তৃপক্ষ নিরব। কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ এর এই অপচয় চলে আসছে। বুধহাটা সাব জোনাল অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজসে এসব বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ মোটর বরো আবাদে ব্যবহার হচ্ছে। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন আর বিদ্যুৎ এর অপচয় হচ্ছে।
এই অনিয়মের বিষয়ে এজিএম তায়জুল ইসলামের নেতৃত্বে চার/পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত ৮ই জানুয়ারি অভিযান চালালেও তারা অনিয়মের বিষয়টি ধামা চাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠে। স্থানীয়ভাবে অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ফলে পাটকেল ঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের নির্দেশে গতকাল বিকাল তিনটায় ঘটনাস্থল দাদপুরে যান একজন ডিজিএম এর নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্তদল। সাথে ছিলেন অনিয়ম ধামা চাপা দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত এজিএম তায়জুল ইসলাম। তদন্ত দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী চক্রটি অভিযোগকারীর উপর চড়াও হয়।
তারা তদন্ত দলের উপস্থিতিতেই অভিযোগকারীকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তদন্ত দলটি হামলাকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা চালায়। হামলার নেতৃত্ব দেয় ওজিয়ার সরদার, তার পুত্র রাসেল, ছাফেত এবং ছাফেত এর পুত্র টুপা ও মজিবুল। তদন্তকারী দলটি ঘটনা স্থলের আরও অন্তত দুটি অবৈধ মোটর এর স্থাপনা পরিদর্শন করেনি।
এদিকে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা ইতোপূর্বে আরও দুই দফায় অভিযোগ কারীর উপর হত্যা চেষ্টা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ বিষয়ে পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এই প্রতিবেদককে জানান, আবাসিক মিটারে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ চালিত মোটর থেকে গৃহস্থালির কাজসহ সর্বোচ্চ বাড়ীর আঙ্গিনায় সবজি ক্ষেতে পানি দেওয়ার সুযোগ আছে। বরো আবাদে ব্যবহৃত এই সব বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ মোটর বন্ধসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।