সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক জোরালো হচ্ছে। আর এই সম্পর্ক আরও জোরালো করতে যাচ্ছে ‘সম্প্রীতি এক্সপ্রেস’।
দুদেশের মধ্যে এই এক্সপ্রেস চালু হবে ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত নতুন এ যাত্রীবাহী ট্রেনটি চলবে।
এর আগে দুদেশের মধ্যে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে নীলফামারী জেলার চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট হয়ে সরাসরি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত এ ট্রেন চলাচল করবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করবেন। এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ট্রেন উদ্বোধন করবেন। করোনার কারণে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুদেশের রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো চলবে যথারীতি।
২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ভারতে যায়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভারতীয় রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৃতীয় ট্রেন চালুর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত হয়, শুরুতে ১০টি কোচ নিয়ে ট্রেনটি সপ্তাহে ২ দিন চলাচল করবে।
সপ্তাহে কোন ২ দিন ট্রেনটি চলবে, তা উদ্বোধনের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে ভারতীয় সময় দুপুর ১২টায় ট্রেনটি ছেড়ে বাংলাদেশের ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায়। পরের দিন বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে পৌঁছবে।
ভারত থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি ১৪৪টি কেবিন সিট এবং ৩১২টি এসি চেয়ারসহ মোট ৪৫৬টি আসন নিয়ে ঢাকায় আসবে। ঢাকা থেকে ৯৬টি বার্থ সিট এবং ৩১২টি এসি চেয়ারসহ মোট ৪০৮টি আসন নিয়ে ট্রেনটি ভারতে যাবে। বার্থ সিটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ ডলার, এসি চেয়ার সিট ৩৩ ডলার এবং এসি চেয়ার ২২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫ বছরের নিচে যাত্রীদের ক্ষেত্রে অর্ধেক ভাড়া (৫০ শতাংশ) রাখা হবে।
রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত মোট ৫৯৫ কিলোমিটার পথ। ঢাকা থেকে চিলাহাটি সীমান্ত পর্যন্ত ৫৩৪ কিলোমিটার এবং নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে চিলাহাটি সীমান্ত পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার। এই দীর্ঘপথে থাকছে উভয় দেশের ১৫টি স্টেশন। তবে কোথাও ট্রেনটি দাঁড়াবে না। শুরুতে ভারত সরকারের দেওয়া ১০টি যাত্রীবাহী কোচ দ্বারা ট্রেনটি চালানো হবে। ইঞ্জিন নিজ নিজ দেশের।
বাংলাদেশের ইঞ্জিন দিয়ে ঢাকা-চিলাহাটি. চিলাহাটি-ঢাকা সীমান্ত এবং ভারতীয় ইঞ্জিন দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি-হলদিবাড়ি, হলদিবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেনটি চালানো হবে। এ ট্রেনের আয় থেকে বাংলাদেশ রেল পাবে ৮৫ শতাংশ এবং ভারতীয় রেল পাবে ১৫ শতাংশ অর্থ। মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের মতো সম্প্রীতি এক্সপ্রেসেও রিটার্ন টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময়ে এই রেলপথ খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মনমোহনের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই সফরের অনেক আগেই বিষয়টি নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একসময় কলকাতার সঙ্গে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির যোগসূত্র ছিল এই রেলপথ।
দার্জিলিং মেলও এই পথেই চলত। স্বাধীনতা, দেশভাগের পরও কিছুদিন এই পথ খোলা ছিল। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পর ভারত ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগকারী এই লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়।