নদী পথ বাংলাদেশের সকল জেলা উপজেলা বা বিভিন্ন অঞ্চলে আছে যাহা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে এবং শ্রমজীবি ও কৃষিজীবি মানুষের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ষাট বা সত্তর দশকের দিকে সাতক্ষীরা জেলার শেষ উপজেলা শ্যামনগর থেকে প্রবাহিত এবং একে বারে উওরে শেষ উপজেলা কলারোয়া পর্যন্ত চার পাশের লোকজনের কৃষি ফসল ফলানোর জন্য বেতনা নদীটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আলুর চাষ, গমের চাষ, টমেটো ঝাল বিভিন্ন শাকসবজি বা শীত কালীন সময়ের সকল প্রকার কৃষিজ জমি বেতনা নদীর পানি সেচের মাধ্যমে চাষ করা হত। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে গোল পাতা নৌকায় করে বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় বিক্রি হতো যাহা গ্রামের অসংখ্যা মানুষ তাদের বসত বাড়ী ছাউনির কাজে ব্যবহার করতো। যাকে বলা হয় গোল পাতার ঘর। প্রতি বাজারের বা গঞ্জের ধারে, নদীর তীরে অসংখ্য পালতোলা বড় বড় এবং ছোট ছোট নৌকা ভিড় করতো। নদীপথে বিভিন্ন পন্য ধান, চাল, খেজুরের গুড়, কাঠাঁল, আম, জাম ইত্যাদি কলারোয়া, ঝাউডাঙ্গা পাটকেল ঘাটা, বিনেরপোতা এলাকা থেকো শ্যামনগর কালিগঞ্জ এমনকি খুলনা জেলার পাইকগাছা, কপিলমনিসহ একেবারে সাগরের পাড় ঘেঁষে সুন্দরবন পর্যন্ত নদী পথে নিয়ে যাওয়া হতো এবং বহু জেলেরা বেতনা নদীর মাছ ধরে তাহা বিক্রয় করে তাদের সংসার এবং জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ খুঁজে বের করতো। আজকের দিনে সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং একথা বলা যায় সাতক্ষীরা জেলার সব এলাকায় বেতনা নদীটি ভরাট হয়ে যাবার কারনে বা স্বার্থান্বেসী মহলের অবৈধভাবে দখল করার কারনে সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এবং দক্ষিন অঞ্চলের মানুষের সাথে কলারোয়া বা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নদীর তীরে বসবাসকারী অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও প্রায় নাই। নদী পথে সার্বিক উন্নয়ন আজকের হুমকির মুখে। তাই সরকার ও তার প্রশাসন এবং সর্বস্তরের জনগনের এই মুহুর্তে উচিত সাতক্ষীরা জেলার যতগুলি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হচ্ছে সর্বপেক্ষা বেতনা নদীর খননের উপর গুরুত্ব এবং তার সেই স্বাভাবিক গতি ও প্রবাহ ফিরিয়ে আনার কর্মকান্ডে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং নদীটির দুই তীরে যে সমস্ত লোকজন বসবাস করে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর প্রতি ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তারা যেন পূর্বের মত আবারোও সাতক্ষীরা জেলার একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পন্য সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে বের করতে পারে এবং জেলার সার্বিক উন্নয়ন আবার ফিরে আসতে পারে। আমাদের মনে রাখা উচিত নদীপথই উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পথ। সমুদ্রের পৃষ্ঠ বৃদ্ধির কারন, জলবায়ুর পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতাই বেতনা নদীটি ধ্বংস হওয়ার জন্য শুধু দায়ী নয়, এর পিছনে একধরনের স্বার্থনে¦ষী মহল দায়ী, যারা নদীর তীর, চর এবং বিভিন্ন ভাবে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছে এবং মাছের ঘের ও বসতভিটা পর্যন্ত তৈরী করেছে। সুতরাং নদীটির গতি বা প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে আজকের প্রায় মৃত। বেতনা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের সময়ে বিভিন্ন বিল এলাকায় বা মাঠে উঠে আসতো এবং তার স্বাদ ও অন্যরকম । বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি মাছ, টেংরা মাছ, পাকাল মাছ, গুলে মাছ, বোয়াল মাছ, চিলা মাছসহ অন্যান্য মাছও এই নদীতে প্রচুর ছিল। সেগুলি আজ বিলুপ্তির পথে। তাই আজ বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার প্রভাবশালী রাজনৈতির দলের নেতাদের কাছে ও এমপি মহোদয়দের কাছে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে দাবী রাখি এই মুহুর্তের যত ধরনের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড হউক না কেন বেতনা নদীটিকে বাঁচানো খুবই গুরুত্বপুর্ণ। নদীটির প্রাণ চঞ্চলতা বাড়াতে পারলে আবার সাতক্ষীরা জেলার জনগণের ভিতরে সেই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ও সুখ ফিরে আসবে। বেতনা নদীটি আমাদের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে গেলে সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়নের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়বে। তাই এখনই সময় নদীর চার পাশের নদীর নিজস্ব যে জায়গা গুলি ছিল তা আবার পুনরুদ্ধার করে নদীটি যদি খনন করা যেত হয়তো পূর্বের সেই স্মৃতি জড়িত বেতনা নদী তার যৌবন ফিরে পেত এবং জনগনের মুখে হাঁসি ফুটতো। এখান থেকে ৫ বছর পূর্বে নদীটি খনন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খনন করার কারনে নদীটির কোন উপকার হয় নাই। সময় এসেছে নদীটি সুষ্ঠ ও পরিকল্পিতভাবে খনন করে নদীর তীরে বসবাসকারী জনগনের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করে, বন্যা ও প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করার এবং আবারো নৌকা পথে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসারন ঘটানোর। আমাদের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদীর কারনে স্বাভাবিকভাবে এদেশের মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা হয়েছে।
লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।