
জাতীয় ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আমার দেশের জনগণের উন্নয়নে কাজ করছি। কিছু মানুষের গণতান্ত্রিক ধারা কখনোই পছন্দ নয়, তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন) শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্ব সম্প্রচার হয়।
সাক্ষাৎকারে সমালোচকদের একহাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষের গণতান্ত্রিক ধারা কখনোই পছন্দ নয়, তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সরকার মতপ্রকাশের অবাধ সুযোগ করে দেয়ার কারণেই বিরোধীরা সমালোচনা করতে পারছে।
শেখ হাসিনা সরকারের টানা ১৪ বছর হয়ে গেছে, আর কত–সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোটে মানুষের সমর্থন পেলেই থাকব ক্ষমতায়, আর না পেলে মেনে নেয়া হবে জনরায়। আমি আমার দেশের জনগণের উন্নয়নে কাজ করছি।’
এর আগে প্রথম পর্বের সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অব্যাহত এ যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই যুদ্ধ (ইউক্রেনে) বন্ধ করতে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’
যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি আমরা। কোনো বিরোধ থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমরা কখনই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না।’ তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের নেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঋণ দেয়ার মাধ্যমে চীনের সৃষ্ট মরণফাঁদ ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়। আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি।’ যুদ্ধ একপক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয়পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন করে এমন প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের কাছাকাছি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’ চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণকাজ করছে, ‘এটিই মূল কথা।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই।’
চীন থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। আমরা বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বেশিরভাগ ঋণ নিয়ে থাকি। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুবই কম। এটা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কারও মতো নয়। অকারণে কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি, কোনো প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।