রুবেল হোসেন: ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে পরিকল্পিতভাবে নারী কেলেঙ্কারীতে ফাঁসানো হয়েছে আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন সানাকে। গত ৩১ স্থানীয় এক নারীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়। মেম্বর মোক্তারকে জোর করে উক্ত নারীর ঘরে ঢুকিয়ে বিবস্ত্র করে চালানো হয় নির্যাতন। সেই ভিডিও প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেনের চাচা আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও প্রকাশ ও ইউপি সদস্যকে মারপিটের ঘটনায় সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ও খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন ইউপি সদস্য মোত্তার হোসেন এর চাচা আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম সানা। এ দিকে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা মামলার বাদী গত ৮ জুন এফিডেভিট সম্পাদন করেছেন। লিখিত এফিডেভিটে তিনি উল্লেখ করেছেন তাকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মেম্বর মোক্তারকে ফাঁসানোর জন্য বলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩১ মে রাতে মির্জাপুর গ্রামে মাজেদ সানার বাড়িতে একটি সালিশে যান মেম্বর মোক্তার। সালিশ থেকে ফেরার পর একই এলকার সাহাবুদ্দীনের স্ত্রী সুমাইয়ার বাড়িতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মেম্বর মোক্তারকে মারপিট করে একই এলাকার মতিয়ার রহমানের পুত্র জিনারুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম কামির, তার পুত্র কাজল, মৃত: রফিক সানারর পুত্র সুমন, মিল্টন, রুহুল আমিনের পুত্র ইসা ও নিতাই দেবনাথের পুত্র সুজন দেবনাথ। পরে ইউপি সদস্য মোক্তারকে বিবস্ত্র করে মারপিট করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রাতেই আশাশুনি থানা পুলিশ মেম্বর মোক্তারকে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন উক্ত নারী মেম্বর মোক্তারের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষন চেষ্টার মামলা দায়ের করলে মোক্তার কে পাঠানো হয় জেল হাজতে। এ ঘটনার ১ সপ্তাহ পর পর গত ৮ জুন মামলার বাদী এই মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে এফিডেভিট করে দিয়েছেন যে, কামরুল ইসলাম কামির কর্তৃক ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে এমন কাজ করেছেন তিনি। ফলে ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন সানা কে মারপিট ও বিবস্ত্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার ঘটনায় ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মোক্তরের চাচা হাকিম হাজী বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ও খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। যার নম্বর যথাক্রমে সি.আর ২৭০/২৩ (আশা) ও ৪০ (সি)/২৩।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেনের চাচা আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম সানা সাতনদীকে জানান, “গত ইউপি নির্বাচনে আমার ভাইপো (মোক্তার মেম্বর) ও কামরুল ইসলাম কামির প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিল। নির্বাচনে আমার ভাইপোর কাছে পরাজিত হওয়ার আক্রোশে সে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে। যেহেতু বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক সেহেতু আমি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।”
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে আনুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুকুজ্জামান, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সাহাবুদ্দীন সানা, ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর এনামুল ও ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হরেন্দ্র দেবনাথ সহ একাধিক ব্যক্তি সাতনদীকে জানান, “ বিষয়টি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। মেম্বর মোক্তারকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন রাতে আগে থেকেই জনৈক আলী হোসেন গাজীর বাসার দ্বিতীয় তলায় ষড়যন্ত্রকারীরা উপস্থিত ছিল। তারা মেম্বরকে ডেকে আমজেদ সানার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওখান থেকে সুমাইয়ার ঘরে জোর করে নিয়ে যায়। যাওয়ার পরে বিবস্ত্র করে তাকে মারপিট করা হয় ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।”
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা শাহানারা ও রহিম বক্স জানান, “ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মেম্বরকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ও ভয় দেখায়।
এ বিষয়ে আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি তবে বিষয়ের সত্য মিথ্যা আমি কিছু জানি না। ওরা জানে আর পুলিশ জানে।”
চাঞ্চল্যকর এ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।