
বিশেষ প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রীট হুমায়ুন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক অস্ত্র ও লাঠিসোঠা সহ দুই সাংবাদিক ও তার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের উপর স্ব-দলবলে ফিল্মি স্টাইলে হামলা করে ৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে নানারকম দেনদরবার করে বেড়াচ্ছে বাহিনী প্রধান হুমায়ুন। জখমিরা নিদারুন যন্ত্রনা নিয়ে দিন যাপন করছে হাসপাতালের বেডে। তাদেরকে দেখতে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। কাপুরুষোচিত এই বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তারা। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ, শ্যামনগরের মানিকখালি গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র সরকারী সম্পত্তি দখলকারী এবং চাঁদাবাজি ও নাশকতা সহ প্রায় ২/৩ ডজন মামলার আসামী হুমায়ুন কবীর ওরফে রীট হুমায়ুন (৪০) এর নানা অপকর্মের তথ্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে গত মঙ্গলবার (৫মে) ইফতারীর পূর্ব মুহুর্তে শ্যামনগরের ভেটখালী বাজারে দৈনিক সাতনদী পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি জিএম আব্রাহাম লিংকন (৩৫) ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার শ্যামনগর উপকূলীয় প্রতিনিধি ও ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শহিদুজ্জামান লিয়ন এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য ৩ সদস্য সহ মোট ৫ জনকে অতর্কিত কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক লিংকনের পিতা আওয়ামীলীগ নেতা আল মামুন বাদী হয়ে বাহিনী প্রধান হুমায়ুন ও হামলাকরী আলমগীর হোসেন ওরফে বাবু (৩২), জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪), জাহিদ হোসেন (২০), সবুর শেখ (৫৫), সাইফুল ইসলাম (২৪), রোকনুজ্জামান ওরফে দোলন (৩২), আব্দুল্লাহ ওরফে চঞ্চল (২২), নুরনবী ইমন (৩৫) ও লাভলু (২৮) সহ আজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনের নাম উল্লেখ করে শ্যামনগর থানায় একটি লিখিত এজহার দাখিল করে। থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে এজহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। (মামলা নং ০৫ তাং ০৫/০৫/২০)।
ঘটনার পর আহতদেরকে উদ্ধার করে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাথায়, কপালে, হাতে একাধিক সেলাই সহ রক্তাক্ত ক্ষত আর সারা শরীরে কাটাফুলাযুক্ত ব্যাথা নিয়ে সেখানে নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে জখমিরা। ৫জনের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার ঔষধ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হচ্ছে হামলার শিকার ঐ পরিবারগুলোকে। যা বর্তমান করোনা সংকটকালীন সময়ে অত্যন্ত দু:সাধ্য হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।
এদিকে ঘটনার পর শ্যামনগর হাসপাতালে জখমিদের দেখতে যান সাবেক সংসদ সদস্য একে ফজলুল হক, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন, রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী, শ্যামনগর প্রেসক্লাব সভাপতি আকবর কবীর, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুমন, রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হায়াত আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বারী, সাবেক ইউপি সদস্য রাশিদুল ইসলাম সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
পরিদর্শনকারীরা হুমায়ুন বাহিনী কর্তৃক এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যাতে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে মামলা রেকর্ড হলেও এখনো পর্যন্ত আটক হয়নি কোন আসামী। হামলার পরও ক্ষান্ত হয়নি বাহিনী প্রধান হুমায়ুন। ফেসবুকে নানারকম পোস্ট ও কমেন্ট করে ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে সে। আবার তুচ্ছ তাচ্ছিল্যও করছে। নিজেকে ধুয়া তুলসি পাতা বানাতে সে হামলার ঘটনাকে প্রতিবাদী যুবকদের প্রতিবাদ বলে ফেসবুকে কমেন্ট করেছে। তবে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গায় নানারকম দেনদরবার করে বেড়াচ্ছে বাহিনী প্রধান হুমায়ুন।এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বাহিনী প্রধান হুমায়ুন সহ মামলার অন্যান্য আসামীরা সুযোগ বুঝে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা এতোই ভয়ংকর যে এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কয়েকদিন আগেও তদন্তকারী এক এসআইকে হেনস্থা করে এই হুমায়ুন । তাই থানা পুলিশ কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আন্তরিক হয়ে যদি তাদের বিরদ্ধে অভিযান চালায় তাহলে তাদেকে আটক করা সম্ভব হবে বলে সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত।
অপরদিকে সন্ত্রাস, নাশকতা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল সহ অসংখ্য মামলার আসামী রীট হুমায়ুন সহ হামলাকারী সকল আসামীকে গ্রেফতারের জন্য জরুরী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) ও জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী আহতরা সহ সচেতন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদা বলেন, হুমায়ুনের বিরুদ্ধ অনেকগুলো মামলা রয়েছে। কোন কোন মামলায় সে জামিনেও রয়েছে। তবে তার সহ হামলাকারী অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।