
আব্দুর রশিদ: যৌতুকের দাবীতে এক অল্পবয়সী তরুনীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনাটি বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের টিকেটে। নির্যাতনের পরে শ্বশুর বাড়ির লোকজন একটি ভ্যানে করে সাতক্ষীরায় পাঠায়। পরে রাত ১২টায় তরুনীর আত্মীয় স্বজনরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে।
তরুনী ও তার আত্মীয় স্বজন মারফত জানা যায়, চলতি বছরে জুলাইয়ের ১৮ তারিখে জিম্মি আক্তারকে(১৯) বিয়ে করে দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের টিকেটের বাসিন্দা মোঃ বাবলু শেখের ছেলে মোঃ সজীব শেখের সাথে। পরিবারের অমতে বিয়ে হওয়ায় শ্বশুর বাড়ি থেকে বিয়ে মেনে নেওয়া হয়নি। কিন্তু ভোগের উদ্দেশ্যে বিয়ে করা সজীব শেখেরও ছিলোনা এ নিয়ে কোন উদ্যোগ। পরিবার থেকে আলাদা করে নিয়ে সজীব তার স্ত্রী জিম্মি আক্তারকে সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরায় একটি ভাড়া বাসায় রাখে। মাস দুয়েক যাওয়ারপর সজীব আস্তে আস্তে দূরে সরতে থাকে জিম্মির কাছ থেকে। এর মধ্যেই ব্যবসায় লস টাকা লাগবে বলে জিম্মির কাছ থেকে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়েছে। এরপরও সজীব জিম্মির কাছে একটি এপাচী মোটরসাইকেল দাবী করে। জিম্মির মা খেটে খাওয়া মানুষ। বাবা দায়িত্বহীন। সজীবের চাওয়া এপাচী দেওয়ার সাধ্য তার বা তার পরিবারের নেই। এ নিয়ে প্রায়ই অশান্তি করতে শুরু করে সজীব। এ ঘটনার পর থেকে সে জিম্মির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সজীবের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে একপর্যায়ে বেশ কয়েক মাসের ভাড়া বাকী পড়ায় ও খোরপোসের অর্থ না থাকায় জিম্মি তার শ্বশুর বাড়ীতে যায় গত বৃহস্পতিবার। শ্বশুর বাড়িতে গেলে সজীব ও তার পিতা মাতা জিম্মিকে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সজীব আবারও বলে আমাকে এপাচী দিলে এখানে সংসার করো নাহলে বাড়ী চলে যাও। অপরদিকে সজীবের পিতা যৌতুক লোভী বাবলু শেখ জিম্মিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় পাঁচ লাখ টাকা না দিতে পারলে তার ছেলেকে ভুলে যেতে। এসময় জিম্মি প্রতিবাদ করলে সজীব, সজীবের বাবা বাবুল, সজীবের মা মনিরা, সজীবের বোন শিউলী মিলে জিম্মির উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালায়।
এ নিয়ে জিম্মি জানায়,‘ সজীব ও তার পরিবারের সবাই আমার ওপর অকথ্য ভাষায় নির্যাতন চালিয়েছে। এসময় সজীব আমার তলপেটে লাথি মারে।’ জিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি মাটিতে পড়ে গেলে সজীবের বাবা, মা ও বোন মিলে আমাকে কিল, ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে সজীবের ও সজীবের বোন শিউলী আমার পরিধেয় কাপড় ছিড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে আমার বমি শুরু হলে স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে আমার প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে একটি ভ্যনযোগে রাত ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পাঠিয়ে দেয়। এসময় আমার মামা খবর পেয়ে আমাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতলে ভর্তি করায়।’ শিউলী জানায় ‘ সজীব আমাকে হুমকি দিয়ে নির্যাতনের বিষয় নিয়ে চুপ থাকতে বলেছে। না হলে আমার লাশও আমার মা পাবেনা। আমি এখন আতঙ্কে আছি।’